News:

Skill.jobs Forum is an open platform (a board of discussions) where all sorts of knowledge-based news, topics, articles on Career, Job Industry, employment and Entrepreneurship skills enhancement related issues for all groups of individual/people such as learners, students, jobseekers, employers, recruiters, self-employed professionals and for business-forum/professional-associations.  It intents of empowering people with SKILLS for creating opportunities, which ultimately pursue the motto of Skill.jobs 'Be Skilled, Get Hired'

Acceptable and Appropriate topics would be posted by the Moderator of Skill.jobs Forum.

Main Menu

সফল হতে বই পড়ুন

Started by Monirul Islam, July 31, 2018, 03:01:02 PM

Previous topic - Next topic

Monirul Islam

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যারের সঙ্গে কথা হলে টের পাই স্যার কেমন পড়েন। শুধু যে বই বা রিপোর্ট পড়েন তা নয়, দিনে একাধিক খবরের কাগজ পড়েন। প্রতিদিনই ডেইলি স্টার-এরক্রসওয়ার্ড আর প্রথম আলোর সুডোকু মিলিয়ে ফেলেন, সকালে। কখনো বাসায়, কখনো গাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে। পড়ার এই অভ্যাস তিনি নিজেই তৈরি করেছেন। সেই মধ্য পঞ্চাশে এসএসসি পরীক্ষার পর প্রতিদিনই তিনি সদ্য চালু হওয়া পাবলিক লাইব্রেরিতে (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার) সকালে চলে যেতেন, দুপুরে বাসায় খেয়ে এসে আবার লাইব্রেরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত চলত তাঁর বইপড়া। ছোটবেলা থেকে যেকোনো বিষয়ের বই পড়তেন, কোনো বাছবিচার ছিল না। সেই সময়ে পাঠ্যবইয়ের বাইরে 'আউট বই' পড়ার ব্যাপারে অনেক পরিবারে আপত্তি থাকলেও স্যারের বাবা তাঁকে অনেক বই এনে দিতেন। দুনিয়ার আজব কাহিনি দিয়ে স্যারের আউট বই পড়া শুরু। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় পড়ে ফেলেছেন 'দস্যু মোহন' সিরিজের এক শ বই। বুয়েটে পড়ার সময় প্রতিদিন ক্লাস থেকে চলে যেতেন ব্রিটিশ কাউন্সিলে, কোনো কোনো দিন ইউএসআইএস লাইব্রেরিতে। নিউমার্কেটে সন্ধ্যায় গিয়ে নলেজ হোমে পড়ে ফেলতেন কোনো না কোনো বই! সব সময় বই পড়ার জগতে থাকার এই অভ্যাস স্যারের এখনো রয়েছে। স্যারের আপ্তবাক্য: 'পড়ার সময় এখনই। বিষয় নিয়ে ভাবার দরকার নেই। শুধু পড়তে থাকো।'

এ শুধু জামিলুর রেজা স্যারের গল্প নয়। মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিলগেটসের কথা ভাবুন। কেমন করে তিনি জানলেন সফটওয়্যারেরই রয়েছে ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ? উত্তর দিচ্ছেন, আমি পড়েছি। কেবল পড়েছি। এবং এখনো পড়ছি। বিল গেটস কেবল পড়েন না। তাঁর ভালো লাগার বইগুলো সম্পর্কে তাঁর পাঠক-অনুসারীকে জানিয়ে দেন। তাঁর নিজের লেখালেখির ব্লগ গেটসনোটের বড় অংশই কিন্তু বই, বই আর বই। পড়ো, পড়ো এবং পড়ো।

তো, কেবল ভবিষ্যৎ জানা, জ্ঞানের আকর কিংবা সম্পদশালী হওয়ার জন্য নয়। নির্মল আনন্দ পাওয়া বা বিনোদিত হওয়ার এমন আশ্চর্য মাধ্যম আর কীই বা আছে?

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ব্যায়াম যেমন শরীর ভালো রাখার জন্য দরকার, তেমনি বই পড়াটা হলো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অতি দরকারি। গবেষকেরা বই পড়ার গোটা বিশেক সুফল তুলে ধরেন। এর মধ্যে কয়েকটা তো খুবই দরকারি।

বই পড়ার সময় আমাদের চোখ আর মন যে কেবল কাজ করে, তা নয়; বরং কল্পনাশক্তিরও একটি চর্চা হয়। মস্তিষ্ক থাকে সচল। ফলে বই পড়া হয়ে পড়ে মানসিক উদ্দীপনার একটি নিয়ামক। গবেষণা বলছে, মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা বড় উপায় হচ্ছে বইয়ের মধ্যে ডুবে যাওয়া। ঔপন্যাসিক আদ্রে জিদ যেমন বলতেন, বই দিয়ে নিজের একটা জগৎ গড়ে তুললে দরকারমতো সেখানে ডুব দেওয়া যায়। জ্ঞান কিংবা শব্দভান্ডারের বৃদ্ধি, নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানা, এসব সুফলের কথা তো আমরা সবাই জানি। তবে বই পড়লে সবচেয়ে বেশি বাড়ে বিশ্লেষণী শক্তি। বেড়ে যায় সমস্যা সমাধানের দক্ষতা। বেড়ে যায় স্বপ্ন দেখার শক্তিও।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে অন্যতম আলোচিত উদ্যোক্তা টেসলা ও স্পেসএক্স কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্কের কথাই ধরা যাক। এলনের বয়স যখন নয়, তখন তিনি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (বিশ্বকোষ) সম্পূর্ণ পড়ে ফেলেছিলেন। সে সময় তিনি বিজ্ঞান কল্পকাহিনি পড়তেন দিনে গড়ে ১০ ঘণ্টা!!! কাজে যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো এত্ত এত্ত স্বপ্ন আর সেটি পূরণের শক্তি কোথা থেকে আসে? তিনি নিজে বলেন, আমি পড়ি। যখনই সুযোগ পায় তখনই পড়ি।

যত পড়া হয় তত লেখার দক্ষতা বাড়ে, নিজেকে মেলে ধরার ক্ষমতা বিকশিত হয়। বই পড়তে হয় মনোযোগ দিয়ে, কখনো কখনো কল্পনাকে ছেড়ে দিলে ফোকাস হওয়ার এক আশ্চর্য ক্ষমতা তৈরি হয় নিজের মধ্যে।

এই যে পড়ার এক জাদুকরি সুফল, সেটি কেমন করে পাওয়া যাবে? সহজ উত্তর: পড়ো, পড়ো, পড়ো।

অনেকেই বলেন, পড়ার সময় পাই না। কাজের মধ্যে ডুবে থাকি, তাই পড়তে পারি না।

আসলে এটি একটি অজুহাত। ১৬-১৮ ঘণ্টা কাজের জগতে ডুবে থাকেন এমন মানুষেরা কিন্তু পড়তে থাকেন ফাঁক পেলে। কারণ পড়াটা হয়ে পড়েছে তাঁদের প্রাত্যহিকতার অংশ।

আপনি যদি ভালো পড়ুয়া হতে চান, তাহলে 'পড়া'কে আপনার জীবনের অংশ করে ফেলতে হবে। ঢাকাবাসীর একটা বড় অংশ কেটে যায় রাস্তায়, যানজটে। সেই সময়টা বই পড়ায় দিয়ে দিন (বুক, ফেসবুক নয়!)। এখন অনেক বই আপনি পড়তে পারবেন আপনার স্মার্টফোনে। বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ল্যাসিক এখন পাবলিক ডোমেইনে এবং এগুলোর ই-বুক পাওয়া যায় বিনা মূল্যে। ইন্টারনেট থেকে সহজে সেগুলো সংগ্রহ করা যায়। বাসায় যখন থাকবেন, তখনো কিছু কিছু পড়তে হবে। প্রতিদিন পড়ার অভ্যাস জিইয়ে রাখার একটা ভালো বুদ্ধি হলো প্রতিদিন কমপক্ষে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকা পড়া।

সব সময় একটা বই হাতের কাছেই রাখতে পারেন। বিল গেটসের মতো অনেকেই একসঙ্গে দু-তিনটি বই পড়তে পারেন। অনেকেই একটার পর একটা পড়েন। নতুন করে বইয়ের প্রেমে পড়তে চাইলে অবশ্য সমান্তরালে কয়েকটা বই পড়া ভালো।

বই পড়াটাকে আপনি আপনার অভ্যাসে পরিণত করার আরেকটা উপায় হলো পড়া বই নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা। একসময় এ দেশে অনেক পাঠচক্র সচল ছিল। এখন সেটি নেই বললেই চলে। বন্ধুদের সঙ্গে কিংবা পারিবারিক আড্ডায় নতুন পড়া বই নিয়ে আলাপ করতে পারেন। যে বই পড়ছেন সেটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখাও যেতে পারে। আপনার দেখাদেখি অনেকেই আপনার সঙ্গে এই আলোচনায় যুক্ত হয়ে যাবেন।

চেষ্টা করলেই বই পড়াকে আপনি আপনার প্রাত্যহিকতার একটি অংশ করে ফেলতে পারবেন। বিভিন্ন গবেষণা বলে, বই পড়ার অভ্যাস করতে সারাক্ষণ একটা বই সঙ্গে রাখতে পারেন। প্রথম দিকে দিনে দুইটা সময় বের করে রাখেন। ১০ মিনিট হলেও ওই সময় কেবল পড়ুন। সময় নিয়ে একটা তালিকা করে ফেলতে হবে যে বইগুলো আপনি পড়তে চান। এই তালিকা কখনো ফুরাবে না। কারণ, নতুন নতুন বই এই তালিকায় যুক্ত করবেন আপনি। ছোট সন্তানদের বই পড়ে শোনান। একদম নিয়মিত। সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন ওদের গল্প পড়ে শোনাবেন। ওদের মধ্যে যেমন পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে, তেমনি আপনি হয়ে উঠবেন একজন ভালো পড়ুয়া। হালকা মেজাজের, কৌতুক কিংবা মজার বইও পড়ুন। সম্ভব হলে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আজ কী পড়লেন, তার একটা সারাংশ লিখে ফেলুন নোটখাতায় কিংবা ফেসবুকের পাতায়।

বিশ্বাস করুন, ঠিক ঠিক তিন মাস যদি এ নিয়ম মেনে চলেন, তাহলেই আপনি হয়ে যাবেন একজন সর্বভুক পড়ুয়া। আপনার বই পড়ার জগৎ আনন্দময় হোক।

বই পড়ার কত যে উপায়

কাগজে ছাপা বই হাতে নিয়ে পড়ার আনন্দই আলাদা। আবার যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় হাতের স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ কম্পিউটারেও ই-বুক বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বই পড়ার সুযোগ রয়েছে। ইন্টারনেটে থাকা তথ্যের মহাসাগরে আছে অসংখ্য বই।

বই পড়তে পারেন এমন কিছু ওয়েবসাইটের নাম দেওয়া হলো—

বিল গেটসের বই ভাবনা: www.gatesnotes.com/Books

চারমিনিটের বই: http://fourminutebooks.com

বইয়ের দুনিয়া গুডরিডস: www.goodreads.com

উদ্যোক্তা ও আগ্রহীদের জন্য ওয়াইকম্বিনেটর: www.ycombinator.com/resources

গডিন ও কাওয়াসাকির বইপত্র: www.sethgodin.comwww.guykawasaki.com

মনন বিকাশের জন্য ফারনাম স্ট্রিট: www.farnamstreetblog.com

এ সময়ের বই নিয়ে পেইজ টার্নার: www.newyorker.com/books/page-turner

মুঠোফোনে

মুঠোফোনে বই পড়ার জন্য ব্লিঙ্কিস্ট, অডিবল, কিন্ডল অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অপারেটিং সিস্টেমে চলা স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটে ই-বুক অ্যাপ দেওয়াই থাকে। সেসবেও অনেক ই-বুক পাওয়া যায়। বিশেষ করে বিশ্বসাহিত্যের চিরায়ত বইগুলো।

সূত্র: প্রথম আলো