News:

Skill.jobs Forum is an open platform (a board of discussions) where all sorts of knowledge-based news, topics, articles on Career, Job Industry, employment and Entrepreneurship skills enhancement related issues for all groups of individual/people such as learners, students, jobseekers, employers, recruiters, self-employed professionals and for business-forum/professional-associations.  It intents of empowering people with SKILLS for creating opportunities, which ultimately pursue the motto of Skill.jobs 'Be Skilled, Get Hired'

Acceptable and Appropriate topics would be posted by the Moderator of Skill.jobs Forum.

Main Menu

শিক্ষিত তরুণের পেশাপরিকল্পনা ও বাংলাদেশ - আবু তাহের খান

Started by Doha, May 06, 2019, 04:39:05 PM

Previous topic - Next topic

Doha

শিক্ষিত তরুণের পেশাপরিকল্পনা ও বাংলাদেশ - আবু তাহের খান

এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে বেকারত্বের চাপ প্রকট বলেই কিংবা কর্মসংস্থানের প্রতিযোগিতা দিন দিন আরো কঠিন হয়ে ওঠার কারণেই শিক্ষিত তরুণকে এখন পেশাচিন্তার ক্ষেত্রে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনার আশ্রয় নিতে হচ্ছে। ধারণাটি একেবারেই যথার্থ নয়। কর্মের সুযোগ কম বা বেশি যা-ই থাকুক না কেন, নিজের সামর্থ্য ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পেশা বেছে নিতে চাইলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার আগেই প্রত্যেক শিক্ষিত তরুণের উচিত তাঁর স্বপ্ন ও প্রত্যাশার সঙ্গে মিল রেখে নিজের সামর্থ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটি বাস্তবভিত্তিক পেশাপরিকল্পনা তৈরি করে সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করা। আর কর্মসংস্থানের প্রতিযোগিতা প্রবল না হয়ে উল্টোটা হলেও এ পরিকল্পনা অত্যাবশ্যক। কারণ কর্মের সুযোগ সহজলভ্য হলে সে ক্ষেত্রে পেশা নির্বাচন করতে গিয়ে দোদুল্যমানতায় পড়ার ঝুঁকিও যথেষ্টই থাকে বৈকি! মোট কথা কর্মবাজার কঠিন হোক বা সহজ হোক, সেখানে প্রতিযোগিতা কম থাকুক বা বেশি থাকুক—নিজেকে মানসম্পন্ন, মর্যাদাবান ও সন্তোষজনক পেশায় দেখতে চাইলে যেকোনো শিক্ষিত তরুণেরই উচিত যত আগেভাগে সম্ভব একটি দূরদর্শী ও চ্যালেঞ্জিং পেশাপরিকল্পনা তৈরি করে সে অনুযায়ী এগোনোর চেষ্টা করা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ পেশাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজটি কি খুবই কঠিন বা জটিল? একজন শিক্ষিত তরুণ নিজে নিজেই কি এটি তৈরি করতে সক্ষম? জবাব হচ্ছে, কাজটি মোটেও কঠিন বা জটিল কিছু নয়। ধারণাগত স্পষ্টতা থাকলে একজন শিক্ষিত তরুণ নিজের পেশাপরিকল্পনা নিজেই তৈরি করতে পারেন এবং বস্তুত সেটিই করা উচিত। এ ব্যাপারে প্রয়োজনে শিক্ষক, অভিভাবক বা পেশাজীবী বিশেষজ্ঞের পরামর্শ বা সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে তা যেভাবেই করা হোক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে—আজকের এই চরম প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে ও প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রসরমাণতার এ যুগে পেশার ধরন ও যোগ্যতার শর্ত যেখানে নিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে, সেখানে সুষ্ঠুভিত্তিক পেশাপরিকল্পনা ছাড়া কোনো শিক্ষিত তরুণের পক্ষেই কাঙ্ক্ষিত মানের ও সন্তোষজনক পর্যায়ের পেশায় নিজেকে যুক্ত করা সম্ভব নয় বললেই চলে।

আনুষ্ঠানিক শিক্ষাক্রমের অধীনে 'পেশাপরিকল্পনা' নামে বাংলাদেশে এখনো কোনো স্বতন্ত্র বিষয় চালু হয়নি। ফলে এ ব্যাপারে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ধারণাগত ও প্রায়োগিক উভয়বিধ জ্ঞানার্জনের ইচ্ছা থাকলেও সুযোগের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি আবার এটাও ঠিক যে পেশাপরিকল্পনা বিষয়ে ন্যূনতম প্রাথমিক জ্ঞান থাকাটা যে প্রত্যেক শিক্ষিত তরুণের জন্যই জরুরি—এটাও আবার অনেকের ধারণায় নেই। আমাদের অনেক শিক্ষিত তরুণই পেশার কথা ভাবেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তির পর এবং তখন তা ভাবতে গিয়ে কর্মবাজারের চাহিদার সঙ্গে নিজের যোগ্যতার কোনো সংগতি খুঁজে পান না। কিন্তু এ ভাবনাটাই যদি তিনি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার গোড়ার দিকে ভাবতেন, তাহলে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে তিনি আগে থেকেই প্রস্তুত করে নিতে পারতেন।

বলা হয়ে থাকে যে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা যথেষ্ট কর্মমুখী নয় এবং এর অধীনে যেসব পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হয়ে থাকে তা আসলে কর্মে নিয়োজন উপযোগী জনবল তৈরি করতে সক্ষম নয়। এ ধারণা পুরোপুরি সত্য নয়। বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার অধীন পাঠ্যক্রমে অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি ও অসম্পূর্ণতাই হয়তো রয়েছে। কিন্তু তার পরও সেটুকুও যদি উপযুক্ত শিক্ষকের মাধ্যমে ঠিকমতো অনুসরণ করা যেত, তাহলে শিক্ষিত তরুণের পেশা অনুসন্ধান হয়তো এতটা কঠিন হয়ে উঠত না।

শিক্ষিত তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে বর্তমানে বড় ধরনের একটি আধা-লুক্কায়িত সমস্যা হচ্ছে মানসম্পন্ন কর্মে (Quality employment) নিয়োজিত হতে না পারা। শেষ পর্যন্ত যেনতেন একটি কাজ তিনি পেয়ে যাচ্ছেন বটে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেটি তাঁর শিক্ষাগত ও আনুষঙ্গিক যোগ্যতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়ে উঠছে না। অন্যদিকে সনদীয় যোগ্যতায় যাঁরা কাজ পাচ্ছেন তাঁরা আবার ওই পদের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না। আসলে বাংলাদেশের কর্মবাজার এখন এরূপ এক জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যে শিক্ষার সামগ্রিক মানোন্নয়ন ছাড়া এ অবস্থা থেকে বেরোনো সত্যি এক দুরূহ ব্যাপার। তবে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পেশাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণকরত ধৈর্য ও পরিশ্রম সহকারে এগোতে পারলে এ ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।

একজন শিক্ষিত তরুণ বা শিক্ষার্থী তাঁর পেশাপরিকল্পনা কিভাবে তৈরি করবেন? পেশা অনুসন্ধানী তরুণকে প্রথমেই একটি সুনির্দিষ্ট পেশাগত লক্ষ্য ঠিক করতে হবে—তিনি কী চাকরি করবেন নাকি উদ্যোক্তা হবেন, চাকরি করলে সেটি কী সরকারি নাকি বেসরকারি, সেটি কী দেশে নাকি বিদেশে ইত্যাদি। অন্যদিকে উদ্যোক্তা হলে সেটি উৎপাদন খাতে হবে নাকি সেবাভিত্তিক ব্যাবসায়িক খাতে, এটি কি রাজধানীকেন্দ্রিক হবে নাকি গ্রামভিত্তিক ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব সুনির্দিষ্ট তথ্য ও ধারণার ভিত্তিতে একেবারে গোড়াতেই তাঁকে নিষ্পত্তি করতে হবে। এ লক্ষ্য নির্ধারণের পর তাঁকে বসতে হবে আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মমূল্যায়নে। তাঁকে অনুপুঙ্খভাবে যাচাই করে দেখতে হবে, উল্লিখিত লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে কী কী যোগ্যতা ও সামর্থ্য তাঁর আছে এবং কী কী তাঁর নেই। যা যা আছে, সেগুলোকে যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে আরো শাণিত করতে হবে এবং সাহস প্রদর্শন, ঝুঁকি গ্রহণ ও ধৈর্য বজায় রাখার কাজে ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে যেসব গুণাবলির ঘাটতি রয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে সেগুলোকে অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। তার পরও যদি লক্ষ্যে পৌঁছানোর কাজটি বিলম্বিত হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে হতাশ না হয়ে ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং তাতে সাফল্য একদিন না একদিন আসবেই।

পেশাচিন্তার পরিধিকে যতটা সম্ভব সম্প্রসারিত ও ব্যাপকভিত্তিক করতে হবে। যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে সারা পৃথিবী বস্তুতই এখন হাতের মুঠোয়। চাকরি ও উদ্যোক্তাবৃত্তি উভয় কাজের জন্যই শুধু দেশের পরিধিকেই সীমানা ভাবলে চলবে না—সমগ্র পৃথিবীর যেখানে যা সুযোগ আছে, তার সব কিছুই ব্যবহারের ব্যাপারে উদ্যমী হতে হবে। আর পেশাসংক্রান্ত যেকোনো চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে অন্তত একযুগ এগিয়ে থেকে চিন্তা করতে হবে। কারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবী এত দ্রুত বদলাচ্ছে যে সেই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নিজের চিন্তাভাবনা ও দক্ষতা স্তরের ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন করতে না পারলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এ যুগে পেশাগত জীবনে সাফল্য অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

পেশাগত জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে সুষ্ঠুভিত্তিক পেশাপরিকল্পনা প্রণয়ন যেমনি জরুরি, তেমনি সমান বা তার চেয়েও বেশি জরুরি হচ্ছে প্রণীত পরিকল্পনা অনুযায়ী দৈনন্দিন চর্চার মধ্য দিয়ে নিজেকে একটু একটু করে গড়ে তোলা। সে ক্ষেত্রে নিজের অধীত বিষয়ের পাশাপাশি সমকালীন অন্যান্য সব বিষয়েই তথ্যের দিক থেকে হালনাগাদ ও জ্ঞানের দিক থেকে গভীরতর মনোযোগের অধিকারী হতে হবে। আর অনিবার্যভাবেই পেশাপরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যই হবে এ ধারণা তুলে ধরা যে স্বনির্ধারিত যোগ্যতা দিয়ে চাকরি খুঁজলে কোনো দিনও চাকরি পাওয়া যাবে না; বরং চাকরিদাতার প্রয়োজন অনুযায়ী নিজের যোগ্যতা তৈরি করে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হবে। বিষয়টি সমানভাবে সত্য উদ্যোক্তাবৃত্তির ক্ষেত্রেও। ক্রেতা বা ভোক্তার চাহিদার সঙ্গে সর্বোচ্চ সামঞ্জস্য বিধানে সক্ষম উদ্যোক্তার পক্ষেই শুধু সম্ভব এ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম সফলতা অর্জন। বাংলাদেশের কর্মপ্রার্থী শিক্ষিত তরুণরা বিষয়টিকে আবেগ বা হতাশার জায়গা থেকে নয়—বাস্তবতার নিরিখে উপলব্ধি করে সে অনুযায়ী নিজেদের গড়ে তোলার ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন বলেই আশা রাখি।



লেখক : পরিচালক, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
atkhan56@gmail.com

Source: Daily Kalerkantho Date: 06.05.19