News:

Skill.jobs Forum is an open platform (a board of discussions) where all sorts of knowledge-based news, topics, articles on Career, Job Industry, employment and Entrepreneurship skills enhancement related issues for all groups of individual/people such as learners, students, jobseekers, employers, recruiters, self-employed professionals and for business-forum/professional-associations.  It intents of empowering people with SKILLS for creating opportunities, which ultimately pursue the motto of Skill.jobs 'Be Skilled, Get Hired'

Acceptable and Appropriate topics would be posted by the Moderator of Skill.jobs Forum.

Main Menu

টেকসই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সবুজ শিল্পায়ন

Started by Doha, April 04, 2019, 09:44:50 AM

Previous topic - Next topic

Doha

টেকসই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সবুজ শিল্পায়ন

ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ধনী দেশগুলোর আগ্রাসী শিল্পোন্নয়ন নীতির কারণে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো পশ্চাত্পদ দেশগুলোর নির্দোষ পরিবেশ আজ চরম বিপর্যয়ের মুখে নিপতিত। শিল্পোন্নত দেশগুলোর কলকারখানা ও অন্যান্য বিলাসী স্থাপনা থেকে নিঃসৃত কার্বন ও অন্যান্য তেজস্ক্রিয় রাসায়নিকের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় অনুন্নত দেশগুলোর পরিবেশ ও নিসর্গই শুধু নয়, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবনও আজ নানাভাবে অস্তিত্বের সংকট মোকাবেলা করে চলেছে। এক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, সংকটের এ মাত্রা এবং এর সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মোটামুটি একটি ধারণা থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া তো দূরের কথা, একটি নিয়ন্ত্রিত স্থিতিশীল অবস্থাও বজায় থাকছে না। বরং দিনে দিনে পরিস্থিতির আরো অবনতিই ঘটে চলেছে এবং তা ঘটছে অনেকটাই জ্যামিতিক হারে।

পরিবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এরই মধ্যে একটি বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে নিপতিত হয়ে আছে এবং বর্তমান অধোগতির ধারা অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে কত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে, সে বিষয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন গবেষণা জার্নাল ও পত্রপত্রিকায় নানা ধরনের মতামত ও পূর্বাভাস প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব মতামত ও পূর্বাভাসের সারকথা হচ্ছে, পরিবেশ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে খুবই বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ যদি পরিবেশ রক্ষায় তার নিয়ন্ত্রণমূলক ভূমিকা ব্যাপকভাবে জোরদার করতে না পারে, তাহলে পরিস্থিতির আরো দ্রুত অবনতি ঘটার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি উপলব্ধি করার পাশাপাশি এটাও মনে রাখা দরকার, এ নিয়ন্ত্রণ আরোপের কাজটি করা প্রয়োজন দ্রুততম সময়ের মধ্যে। কারণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেটিকে পুনরুদ্ধারের জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হবে, তা বিনিয়োগের সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। ফলে সে রকম বড় ধরনের কোনো পরিবেশ বিপর্যয় যাতে না ঘটে, সেজন্য আরো ব্যাপকভিত্তিক সতর্কতামূলক ও নিয়ন্ত্রণধর্মী ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।

দ্বিতীয়ত, সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনীতির গতিধারার তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যথেষ্ট উচ্চহারে বিকশিত হচ্ছে। এর সুনির্দিষ্ট বস্তুগত অর্থ হচ্ছে, এ অর্থনীতির বিভিন্ন বিকাশমান খাতের মধ্যে ক্রমেই বড় হয়ে উঠছে শিল্প তথা ম্যানুফ্যাকচারিং খাত, যার পদে পদে রয়েছে পরিবেশ ঝুঁকির আশঙ্কা। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারকে দ্রুত ও উচ্চতর করতে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে বিকশিত করার বিপরীতে দেশের পরিবেশের ক্ষেত্রে যাতে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি বা বিপর্যয় নেমে না আসে, সংশ্লিষ্ট সবাইকে এখনই সেদিকটির প্রতি যথেষ্ট দৃষ্টি ও মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কঠোর ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নিয়ে এগোতে হবে। নইলে উচ্চতর প্রবৃদ্ধির ধারায় দেশের অর্থনীতি যতটুকু সমৃদ্ধি পাবে, পরিবেশের ক্ষতির মধ্য দিয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে, যা লাভের বড় অংশ দিয়েও পরে আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না।

বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সবুজ ব্যাংকিংয়ের আহ্বান জানিয়েছিল এবং এ ব্যাপারে বেশকিছু কার্যকর উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকে ওই সবুজ ব্যাংকিংয়ের সূত্র ধরেই দেশে সবুজ শিল্পায়ন কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তাব করছি, যার মূল লক্ষ্য হবে পরিবেশ বাঁচিয়ে শিল্পায়নকে এগিয়ে নেয়া। সবুজ শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে থাকবে: এক. এটি কোনোভাবেই মৃত্তিকা, প্রাণী, বৃক্ষ, বায়ু, পানি ও সর্বোপরি কোনোরূপ ক্ষতিসাধন করবে না। আর সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরও যদি একান্তই কোনো ক্ষতি হয়ে যায়, তাহলে শিল্পসংক্রান্ত কার্যক্রম চলার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ক্ষতির জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও একই কার্যক্রমের আওতায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

দুই: সবুজ শিল্পায়নের আওতায় যেকোনো শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে কাঁচামাল হিসেবে বৃক্ষ ও কাঠের ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা হবে। প্রয়োজনে বৃক্ষ বা কাঠভিত্তিক প্রচলিত ধারার শিল্পের পরিবর্তে এসবের বিকল্প উপায় অনুসন্ধান করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ: কাগজ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে মণ্ড প্রস্তুতের জন্য যেহেতু বিভিন্ন বৃক্ষ বা গাছ ব্যবহার করতে হয়, সেহেতু বৃক্ষভিত্তিক কাগজ শিল্পের বিকল্প হিসেবে কাগজের পরিবর্তে অনলাইনভিত্তিক লিখন ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে। এতে একদিকে যেমন বৃক্ষ নিধন হ্রাস পাবে, অন্যদিকে তেমনি এ যোগাযোগ ব্যবস্থায় আর্থিক ব্যয়ও অনেকখানি কমে আসবে এবং এতে সময়েরও ব্যাপক সাশ্রয় হবে।

কাঠভিত্তিক শিল্পকে নিরুৎসাহিত করার আরো একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। প্রচলিত ধাঁচের ইটভাটা, ধানের চাতাল, আখ মাড়াই কল—যেসব শিল্পে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার হয়, সেসব শিল্পকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং এসব শিল্পের উদ্যোক্তাদের কাঠের পরিবর্তে বিকল্প জ্বালনি ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। বন বা গাছগাছালি রয়েছে এরূপ স্থান থেকে গাছ কেটে শিল্প স্থাপনের প্রস্তাবও একইভাবে কঠোরতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে একটি দেশের মোট আয়তনের ন্যূনতম ২৫ শতাংশ যেখানে বনাঞ্চল থাকা উচিত, সেখানে বাংলাদেশে তা রয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ।

তিন: জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি সহায়তাদান কার্যক্রমেও সবুজ শিল্পায়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। এটি খুবই জানা তথ্য যে চালের গায়ে 'কুড়া' নামে যে লালচে আভরণ থাকে, বিদ্যুত্চালিত চালকলে ধান মাড়াই করতে গিয়ে সেটি আর অক্ষত থাকে না। অথচ এ কুড়া শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যার অভাবে বেরিবেরি ও অন্যান্য রোগব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। অতএব বোঝাই যাচ্ছে বাজার থেকে আমরা কলভাঙা যে ঝলমলে রঙের চাল কিনে খাই, প্রতিনিয়ত তার পরিবর্তে যদি ঢেঁকিছাঁটা চাল খাওয়ার সুযোগ থাকত, তাহলে সেটি আমাদের মতো ব্যাপক পুষ্টি ঘাটতির দেশে সাধারণ মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে অনেকখানি সহায়ক হতে পারত।

এ অবস্থায় পল্লী অঞ্চলে ধান মাড়াইয়ের ক্ষেত্রে ঢেঁকিছাঁটা চালের প্রচলন ফিরিয়ে আনা যায় কিনা, সেটি বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে পারে যে ঢেঁকিতে ধান ভানতে যে কায়িক শ্রম প্রয়োজন, সেটি যথেষ্ট মানবিক কিনা। বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে দেখা গেছে যে প্রচলিত ধাঁচের ঢেঁকিকে কিছুটা উন্নত করে সেটির ওঠানামার জন্য কায়িক শ্রমের পরিবর্তে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। আর তা করা গেলে এক্ষেত্রে ঢেঁকির উৎপাদনশীলতা যেমন বহুলাংশে বেড়ে যাবে, তেমনি এ ক্ষেত্র থেকে কায়িক শ্রমের বিষয়টিও অনেকাংশ হ্রাস করা সম্ভব হবে।

চার: সবুজ শিল্পায়নের আওতায় উচ্চদূষণযুক্ত শিল্প স্থাপনকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে ওইসব দূষণযুক্ত শিল্পের পণ্য নিজেরা উৎপাদন না করে বিদেশ থেকে আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। ব্রিটেন যেমন উচ্চতর শ্রমব্যয় সাশ্রয়ের জন্য সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজেরা পর্যাপ্ত চিনি উৎপাদন না করে বিশেষ সহযোগিতা দানের বিনিময়ে তা কেনিয়া ও ব্রাজিল থেকে আমদানি করে থাকে, নিজেদের পরিবেশের স্বার্থে বাংলাদেশকেও তেমনি শিল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনুরূপ কৌশলী হতে হবে।

পাঁচ: পাট ও এ-জাতীয় প্রাকৃতিক তন্তুভিত্তিক শিল্প স্থাপনকে উৎসাহ দিতে হবে। এটি যে শুধু পলিথিন ও অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিকের মাধ্যমে সৃষ্ট দূষণের হাত থেকে বাংলাদেশের মৃত্তিকা, পানি ও বায়ুকে রক্ষা করবে তা নয়। একই সঙ্গে তা পাটের পুনরুজ্জীবন ও রফতানি সম্ভাবনাকেও বাড়িয়ে তুলবে। উল্লেখ্য, সারা পৃথিবীতেই এখন পাটের মতো প্রাকৃতিক আঁশজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে এখন সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করতে পারেনি। বিষয়টি আরো গভীরভাবে ভেবে ও তলিয়ে দেখা প্রয়োজন। বিশেষত পাটজাত পণ্যের আর কী কী ধরনের কার্যকর বহুমুখীকরণ হতে পারে, সংশ্লিষ্ট গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলো সে বিষয়ে আরো মনোযোগের সঙ্গে তাদের চিন্তাভাবনা প্রয়োগ করে দেখতে পারে।

ছয়: নৌপথে কাঁচামাল ও পণ্য সরবরাহকরণ এবং পানি সংগ্রহ ব্যবস্থার সুবিধার্থে একসময় নদ-নদী ও প্রবহমান জলাধারের তীরবর্তী স্থানে শিল্প স্থাপনের ধারণাকে উৎসাহিত করা হতো। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি খাতের অধিকাংশ পাট ও বস্ত্রকল, সার কারখানা এবং অন্যান্য ভারী শিল্পই নদী-তীরবর্তী স্থানে গড়ে উঠেছে। আর নদীদূষণের জন্য এ শিল্প-কারখানাগুলোই এখন সবচেয়ে বেশি দায়ী। অতএব সবুজ শিল্পায়নের আওতায় নদী ও প্রবহমান প্রাকৃতিক জলাধারের পাশে শিল্প স্থাপনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে শিল্প-কারখানার অনুমোদন দানকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে (যথা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—বিডা এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন—বিসিক) আরো যত্নবান ও সতর্ক হতে হবে। বেপজা কর্তৃক নতুন ইপিজেড স্থাপন, বেজা কর্তৃক নতুন এসইজেড স্থাপন কিংবা বিসিক কর্তৃক নতুন শিল্প নগরী বা শিল্প পার্ক স্থাপনের ক্ষেত্রেও এ নীতিমালা কঠোরভাবে মেনে চলা প্রয়োজন।

সাত: জীবজন্তু, পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর আবাসস্থল উচ্ছেদ করে বা তাদের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এরূপ কোনো শিল্পের ধারণাকে সবুজ শিল্পায়নের আওতায় সমর্থন করা যাবে না। এমনকি শিল্প স্থাপনের পর ওইসব প্রাণীর বসবাস ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকলে সেটিকেও নিরুৎসাহিত করতে হবে। সুন্দরবন, ভাওয়ালের গড়, মধুপুরের গড় প্রভৃতি বৃহৎ বনাঞ্চল আজ যেসব কারণে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে, তার মধ্যে ওইসব এলাকায় অপরিকল্পিত শিল্পায়ন অন্যতম।

এখন কথা হলো, সবুজ শিল্পায়নকে কীভাবে উৎসাহিত ও জোরদার করা যাবে? এক্ষেত্রে প্রথম কথা হলো, বিষয়টিকে শুধু আহ্বানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না। দ্বিতীয়ত, শিল্প-কারখানাটি স্থাপিত হয়ে যাওয়ার পর পরিবেশ সংরক্ষণমূলক পরিধারণ ও পরিদর্শনমূলক কার্যক্রম জোরদার করার প্রচলিত রেওয়াজ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পরিবেশকে দূষণযুক্ত শিল্পের হাত থেকে রক্ষা করতে চাইলে শিল্প স্থাপনের আগেই তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

কোন কোন শিল্প স্থাপন করলে তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হবে না বা তা দূষণরোধে সহায়ক হবে, সে-সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক তথ্যাদি ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে বিসিক, বিডা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলে পরিবেশবান্ধব শিল্পের একটি তালিকা প্রণয়ন করা যেতে পারে। অতঃপর সে তালিকার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ সহায়তাদানের জন্য তা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাঠানো যেতে পারে। অন্যদিকে একই উদ্যোগের আওতায় পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা রয়েছে বা পরিবেশ দূষণ করছে—এরূপ শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর উচ্চহারে করারোপের জন্য অন্য একটি তালিকা তৈরি করে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনআরবি) কাছে পাঠানো যেতে পারে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উদ্যোক্তার শিল্পঋণসংক্রান্ত প্রস্তাব মূল্যায়নকালে পরিবেশ রক্ষা পাওয়া বা না পাওয়ার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এমনকি সম্ভব হলে ব্যাংকের সুদের হার ও অন্যান্য প্রযোজ্যতা নির্ধারণকালে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি স্বতন্ত্র গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা যেতে পারে।

সবুজ শিল্পায়ন কার্যক্রমকে জোরদার করে বাংলাদেশের এ উদ্যোগের কথা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে, যাতে বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব 'সবুজ শিল্প' থেকে পণ্য আমদানির ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ ও আগ্রহ বোধ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে দেশে একটি জাতীয় শিল্প উন্নয়ন পরিষদ (এনসিআইডি) এবং এর পক্ষে কাজ করার জন্য শিল্পমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এনসিআইডির একটি নির্বাহী কমিটি রয়েছে। উল্লিখিত পরিষদ ও কমিটি এ বিষয়গুলো বিস্তারিত পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে নীতিনির্দেশনামূলক পরামর্শ প্রদান করতে পারে। তবে এ পরিষদ ও কমিটির সভা সংখ্যা যেহেতু কিছুটা কম, সেহেতু এ ব্যাপারে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর নির্বাহী পর্যায়েও এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা যেতে পারে, যেমনটি আগে উল্লেখ করা হয়েছে।

'সবুজ শিল্পায়ন' এখন আর শুধু একটি স্লোগান বা আহ্বান নয়, এটি এখন আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে নিয়ত জড়ানো একটি অনিবার্য অনুষঙ্গও। ফলে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভাবনার দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, নিকট ভবিষ্যতের জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু সংকটের সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলার প্রয়োজন থেকেও তা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর সে গুরুত্বের বিষয়টি আমাদের বর্তমান ও আগামী দিনের শিল্পোদ্যোক্তারা যত দ্রুত ও সহজে অনুধাবন করবেন, বাংলাদেশের মানুষ, জীবন ও পরিবেশকে ততটাই সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে বলে আশা করা যায়।


Abu Taher Khan
Director-CDC
Daffodil International University

atkhan56@gmail.com

Source: http://bonikbarta.net/bangla/news/2019-04-04/192752