ফিটনেস ইন্সট্রাক্টর হিসেবে গড়তে পারেন ক্যারিয়ার(http://www.ittefaq.com.bd/admin/news_images/2013/01/24/thumbnails/image_13727.jpg)
হলিউডের সব ছবিতে আর্নল্ড শোয়ার্জনিগার, ভ্যান ড্যাম, জ্যাসন স্ট্যাথামদের মতো নায়কদের শারীরিক গঠনে মুগ্ধ হয় না, এমন ছেলে খুব কমই রয়েছে। আর যাদের অল্প বয়সেই এসব নায়কদের 'সিক্স প্যাক' শরীরের ছবি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, তাদের হয়ত ছোটবেলা থেকেই মনের কোণায় ইচ্ছে তৈরি হয় সিক্স প্যাক শরীরের। এরকম অনেক ছেলের ঘরে ঢুকলেই পাওয়া যাবে এসব নায়কদের খোলা শরীরের ছবি। কিন্তু ছবি টাঙ্গিয়ে আর মনে মনে কল্পনা করলেই কি আর এসব নায়কদের মতো শরীরটা তৈরি করা যায়? যায় না বলেই অনেকেই ছোটবেলা থেকেই জোরসে শুরু করে ব্যায়াম। তবে অনেকেই তা ধরে রাখতে পারে না। আর সে কারণেই কিছুটা শরীর তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত আবার সেই পুরোনো রূপেই ফিরে যেতে হয়। আগের দিনগুলোতে আবার এখনকার মতো এত জিম ছিল না। ফলে ফলে নির্দেশনার অভাবও ছিল। তবে এখন আবার পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন অনেক জায়গাতেই রয়েছে জিম। আবার কেবল শরীর গঠনই নয়, এখন তার সাথে যোগ ব্যায়াম বা অন্যান্য উপকরণ মিলিয়ে পুরো বিষয়টাই নিয়েছে ভিন্ন ধরনের চেহারা।
কাজের সুযোগ
যোগা বা ফিটনেস ট্রেনিংয়ের একটা খুব উপকারী দিক হল এতে নানারকম ছোটখাটো রোগ বা কোনও দীর্ঘস্থায়ী রোগ অনেকটাই ভালো হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, যোগাসনে অনেক ধরনের রোগ হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে এই কাজের পেশাদারদের আয়ের সুযোগও ক্রমশ বেড়েছে। তবে মনে রাখতে হবে যে, এই পেশায় প্রথম থেকেই কিন্তু আশানুরূপ উপার্জন হয় না। তবে সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে আয় অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। যেহেতু ফিটনেস ট্রেনিংয়ের জন্য যারা আগ্রহী হন, তারা সকলেই অর্থনৈতিক দিক থেকে সচ্ছল বা উন্নত অবস্থা থেকে আসেন। সুতরাং, এই পেশায় টাকাপয়সা লোকসান হওয়ার ভয় কম। তবে প্রথমেই নিজেকে তৈরি করতে হবে। কোনও একটা ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে প্র্যাকটিকাল এবং থিয়োরি?দুই ধরনের শিক্ষাতেই নিজেকে শিক্ষিত করতে হবে। ফিটনেসের মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরিক আসপেক্ট সম্বন্ধে ভালো করে জানতে হবে। কোনও বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টরের চাকরি পেতে গেলে কিন্তু নিজেকে অনেক বেশি পরিশ্রম করে সেই যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। তবে সব স্কুলেই শরীর চর্চার শিক্ষক কম-বেশি নেওয়া হয়। তাই এসব স্কুলেও পেতে পারেন চাকরি।
মূল কথা হলো, প্রতিটি মানুষের নিজস্ব প্রয়োজন বুঝে সঠিক ফিটনেসের রাস্তা দেখানোই এই পেশার প্রধান কাজ। তবে বিভিন্ন এনজিও বা আশ্রম ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোয় কিন্তু স্থায়ী যোগশিক্ষকের কাজ থাকে। সেসব প্রতিষ্ঠানে বায়োডেটা এবং আবেদনপত্র পাঠিয়ে কাজ পাওয়ার চেষ্টা করতে হয়।
ফিটনেস প্রশিক্ষণ যোগাসন বা ব্যায়ামের পাশাপাশি সহজে কাজ হাসিল করার জন্য অনেকেই শরণাপন্ন হচ্ছেন মাল্টি জিমের। জিমনাশিয়ামের আধুনিক রূপটিই হল জিম। এখানেও প্রয়োজন হয় ফিটনেস ট্রেনিং প্রফেশন্যালদের। এখানে যোগাসন বা ব্যায়ামের বিশদ প্রশিক্ষণের কোনও স্কোপ নেই। এখানে ব্যায়াম-সহায়ক মেশিনগুলোর ব্যবহার ভাল করে জেনে রাখতে হয়। একজন তিরিশ বছরের বেশি বয়সি মানুষের দেহের বাড়তি ফ্যাট ঝরানোর উপায় যেমন বলে দিতে হয়, তেমনই একজন আঠারো-উনিশ বছর বয়সের ছেলে কীভাবে সিক্স প্যাক তৈরির রাস্তায় হাঁটবে, তা-ও শেখাতে হয় ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টরদের। তাই এদের কাজের জায়গা অনেকটাই বিস্তৃত।
দরকারি পড়াশোনা
ফিটনেস প্রশিক্ষণের কাজ করতে গেলে মানুষের শরীর নিয়ে কিছু নির্দিষ্ট পড়াশোনাও করে রাখতে হয়। মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, শরীরস্থান বা অ্যানাটমি নিয়ে পড়াশোনা না করলে কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। একজন ফিটনেস এক্সপার্টের কাজ হল, একজন ক্লায়েন্টের জন্য উপযুক্ত ফিটনেস প্রোগ্রাম বানিয়ে দেওয়া। এখন সেই ফিটনেস প্রোগ্রামের সঙ্গে কিন্তু সেই ধরনের ব্যায়ামের সঙ্গে উপযুক্ত ডায়েটের আউটলাইনও। সেই ডায়েট অনুসারে খাওয়া-দাওয়া করে চললেই তবে জিম করার পুরোপুরি ফল পাওয়া যায়। তাই ফিটনেস ইনস্ট্রাকটরকে নিউট্রিশন বা পুষ্টিবিজ্ঞান এবং ডায়েটিক্স নিয়েও বেসিক পড়াশোনা শিখতে হয়। ক্লায়েন্টকে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সুরক্ষিত লাইফস্টাইলের রাস্তা দেখাতে গেলে ইনস্ট্রাকটরকে একসঙ্গে অনেকগুলো আসপেক্ট মনিটর করেই এগোতে হয়।
ফিটনেস ট্রেনিংয়ের ধরণ
ফিটনেস ট্রেনিংয়ের তিনটি প্রধান ধরণ রয়েছে। এগুলো হলো?
১. গ্রুপ ফিটনেস ইনস্ট্রাকটর :যারা কোনো গ্রুপকে বা ক্লাবে বা ক্লাসরুমে এক-একটি দলকে ফিটনেস প্রশিক্ষণ দেন।
২. এক্সারসাইজ স্পেশালিস্ট :এরা ফিজিশিয়ানের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যায়াম শিখিয়ে থাকেন। সাধারণত বিভিন্ন রোগীরা তাদের রোগ সারানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম শেখার জন্যই এদের কাছে আসেন।
৩. পার্সোনাল ট্রেনার :এই ধরনের ট্রেনাররা কোনও প্রতিষ্ঠানে ফিটনেস ট্রেনিংয়ের জন্য আসা প্রতিটি মানুষকে আলাদা করে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। গ্রাহকদের সন্তুষ্টিই এদের কাজের একটি প্রধান শর্ত।
অনেক স্থানেই আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তিন ধরনের ট্রেনিং প্রদান করা হয়। এগুলো হলো?
১. দ্য এসিই গ্রুপ ফিটনেস ইনস্ট্রাকটর সার্টিফিকেশন
২. এসিই ক্লিনিক্যাল এক্সারসাইজ স্পেশালিস্ট সার্টিফিকেশন
৩. এসিই লাইফস্টাইল অ্যান্ড ওয়েট ম্যানেজেমন্ট কনসালট্যান্ট সার্টিফিকেশন
এখন ঢাকা শহরে প্রচুর জিম গড়ে উঠেছে সব স্থানেই। এর মধ্যে বড় বড় জিমেরও অভাব নেই। এসব জিমে শরীর গঠনের প্রায় সব ধরনের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণই পাওয়া যায়। আবার ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টর হতে চাইলেও এসব জিমেই পাওয়া যাবে সুযোগ। তার জন্য এসব জিমে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময়েই তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন। ভালো একজন ইনস্ট্রাক্টর হয়ে উঠতে পারলে জিমগুলোই আপনাকে ডেকে নেবে।
প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টর হতে পারলে কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে সব স্থানেই। আর যারা ছোটবেলা থেকেই শরীর নিয়ে চিন্তিত, তাদের জন্য তো এটি হতে পারে পছন্দের এবং স্বপ্নের এক আদর্শ ক্যারিয়ার। কাজেই আর সময় নষ্ট না করে এখনই খুঁজে বের করুন আপনার জন্য উপযোগী জিম আর শুরু করে দিন প্রশিক্ষণ।Source: http://goo.gl/VePFRw