ক্যারিয়ার গড়তে গ্রাফিক ডিজাইনফ্রিল্যান্সিং আর আউটসোর্সিং সময়ের অন্যতম আলোচিত শব্দগুচ্ছ। প্রযুক্তির অগ্রগতির অনুষঙ্গ হিসেবেই এই শব্দগুচ্ছ এখন তরুণদের মুখে মুখে। সারা বিশ্ব যখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে, ইন্টারনেটের প্রসারে কমে এসেছে দেশ থেকে দেশের দূরত্ব; তখনই ফ্রিল্যান্স আর আউটসোর্সিংয়ের সুযোগটা ছড়িয়ে পড়ছে সবখানেই। ইন্টারনেট সংযোগ আর কাজের দক্ষতা থাকলে এখন আমাদের দেশে বসেই বিদেশের কাজ করে দেওয়া যায়, উপার্জন করা যায় বৈদেশিক মুদ্রা। আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরেই ভালো করে আসছে। জনপ্রিয় সব অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশিদের কাজ প্রশংসিত হয়ে আসছে। এই আউটসোর্সিংয়ের অন্যতম চাহিদাপূর্ণ একটি কাজের নাম গ্রাফিক ডিজাইন। একটি পিসি, ইন্টারনেট সংযোগ আর গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ জানা থাকলে ঘরে বসে আপনিও আয় করতে পারেন অর্থ। গ্রাফিক ডিজাইনের নানা দিক সম্পর্কে এই লেখায় জানাচ্ছেন তরিকুর রহমান সজীব(https://encrypted-tbn2.gstatic.com/images?q=tbn:ANd9GcTueMcUU88c-RtncFV9E9xxk-srPgrxE6NqEsFS0Gqt5zoP8VSsYQ)
নানাভাবে কম্পিউটার নির্ভর গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করা যায়। গ্রাফিক ডিজাইন সাধারণত মুদ্রণ ও ওয়েব মাধ্যমে নানা ধরনের কাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব ধরনের ওয়েবসাইট তৈরির জন্য বা নানান অনলাইন বিজ্ঞাপনের জন্য অত্যন্ত জরুরি উন্নত গ্রাফিক ডিজাইন। এ কাজের জন্য বিদেশি বিভিন্ন ওয়েবসাইট আর বিজ্ঞাপনের জন্য কোম্পানির চাহিদামত ডিজাইন করতে হয়। তবে তার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই একেবারেই। ঘরে বসেই দেশের বাইরের গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করা যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। আর ইন্টারনেটে ডিজাইন করতে করতেই গড়ে তোলা যায় নিজের পেশা। শুরুর দিকে এ খাতে কাজের ক্ষেত্র সীমিত থাকলেও ধীরে ধীরে এ ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ বেড়েই চলেছে। এখন এ ধরনের কাজ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও করছে, যেখানে চাকরিও পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিক্সের কাজের মধ্যে সহজ কাজগুলো হচ্ছে নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে ছবি সম্পাদনা, ছবি ঠিকঠাক করা ইত্যাদি। এসব করার জন্য ওই নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের ওপর দক্ষতাই যথেষ্ট। এর বাইরেও ওয়েবসাইট ডিজাইনসহ গ্রাফিকসের বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে। গণমাধ্যমের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ব্যবহূত হচ্ছে এ ধরনের কাজ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এ কাজগুলো অন্য দেশ থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করিয়ে থাকে। যেসব দেশ এ কাজগুলো করে থাকে, তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। শুধু আছে নয়, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা শক্তিশালী একটি জায়গা দখল করে রেখেছে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে। কাজেই গ্রাফিক্সের কাজ শিখে নিজেই গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ শুরু করে দিতে পারেন। আবার নিজের উপর খুব বেশি আত্মবিশ্বাস না থাকলে সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়েও করতে পারেন কাজ। অনেক প্রতিষ্ঠানই রয়েছে, যেগুলো গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখানোর পর কাজও করিয়ে নেয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও কাজ শুরু করতে পারেন।
কাজের সম্ভাবনা
কাজের সুযোগ বাড়তে থাকায় বর্তমানে গ্রাফিক ডিজাইনে রয়েছে যথেষ্ট সম্ভাবনা। গ্রাফিকসের নানা ধরনের কাজের মধ্যে রয়েছে ছবি সম্পাদনা (ক্লিপিং পাথ), ছবির দাগ দূর করে ছবি পরিস্কার করা এবং ছবির বিভিন্ন ধরনের সম্পাদনা ও সংযুক্তি (ইমেজ এনহান্সমেন্ট), বিভিন্ন ওয়েবসাইটের টেম্পলেট তৈরি, ওয়েবসাইটের পটভূমি, ব্যানার, বাটন, আইকন, নিবন্ধন ও লগ-ইন ফরম, বিজনেস কার্ড ইত্যাদি।
যেভাবে কাজ করা যায়
গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে চাইলে খুব বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও চলবে। সাধারণভাবে মাধ্যমিক পর্যায় শেষ করেই এ কাজে যুক্ত হওয়া যায়। তবে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর এ কাজ করা সহজ হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে আউটসোর্সিংয়ের কাজে রয়েছে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার। ইংরেজিতে দক্ষতা না থাকলে এ কাজে ভালো করাটা বেশ কঠিন। আর আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে খুব বেশি দখল থাকে না। কাজেই গ্রাফিক্সের কাজ করতে চাইলে শুরু থেকেই ইংরেজিতে দক্ষার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। এর পরেই রয়েছে গ্রাফিক্সের উপর নানান সফটওয়্যারের ধারণা। প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট কাজের নির্দিষ্ট কিছু সফটওয়্যারের কাজ জানা থাকলে কাজ পাওয়া সহজ হয়। আর কাজ করতে করতেই শিখতে হবে নতুন নতুন কাজ।
প্রয়োজনীয় কিছু ওয়েবসাইট
শুধু গ্রাফিক্সের কাজ পাওয়া যায় এমন বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে। এসব ওয়েবসাইটে নিজের করা বিভিন্ন গ্রাফিক্স সংক্রান্ত কাজগুলো জমা রাখা যায়। এখানে আবার নির্দিষ্ট কাজের অর্ডারও সংগ্রহ করা যায়। এ রকম একটি ওয়েবসাইট হচ্ছে থিমফরেস্ট (www.themeforest.net), যেখানে একজন ডিজাইনার তার তৈরি ওয়েবসাইটের টেম্পলেট বা পূর্ণাঙ্গ ডিজাইন বিক্রি করতে পারেন। শুধু গ্রাফিক্সের নানা ধরনের কাজ নিয়ে রয়েছে আর একটি সাইট গ্রাফিক রিভার (www.graphicriver.net)। গ্রাফিক্সের কাজের জন্য আরও কিছু ওয়েবসাইটের মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাশডেন (www.flashden.com), অডিওজঙ্গল (www.audiojungle.net), ভিডিওহেইভ (www.videohive.net) ইত্যাদি। এ পাঁচটি ওয়েবসাইট নিয়ে গঠিত হয়েছে এনভাটো মার্কেটপ্লেস। এনভাটো (www.envato.com) মার্কেটপ্লেসের এ পাঁচটি ওয়েবসাইটের যেকোনো একটিতে কিছু তথ্য দিয়ে বিনামূল্যে নিবন্ধনের মাধ্যমে সবগুলো সাইটের সদস্য হওয়া যায়। সদস্য হওয়ার পর এসব সাইটের সম্পূর্ণ টেম্পলেট ডিজাইন করতে হবে না, বরং একটি সাইটের বিভিন্ন গ্রাফিক্স আলাদা আলাদাভাবে তৈরি করে বিক্রি করা যাবে। এসব সাইটের নানা ধরনের কাজের মধ্যে রয়েছে ওয়েবসাইটের ব্যাকগ্রাউন্ড, ব্যানার, নিবন্ধন ও লগ-ইন ফরম, বিজনেস কার্ডসহ আরও বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন তৈরির কাজ। এসব সাইটে একটি ডিজাইন একাধিকবার বিক্রিও করা যায়। সাইটগুলোর অসংখ্য বিভাগের মধ্য থেকে নিজের ইচ্ছেমতো যেকোনো ধরনের ডিজাইন তৈরি করে বিক্রি করা যাবে। তবে সাইটের নিয়ম অনুযায়ী ডিজাইন জমা দেওয়া জরুরি। শুধু ডিজাইন নিয়ে আরেকটি ওয়েবসাইট হলো নাইন্টিনাইন ডিজাইনস (www.99designs.com) এ সাইটটি শুধু ডিজাইনারদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই সাইটে ওয়েবসাইট ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, বাটন ও আইকন ডিজাইন, টি-শার্ট ডিজাইন ও ব্যানার ডিজাইনের কাজ পাওয়া যায়। এখানে প্রত্যেকটি ডিজাইন সম্পন্ন করার জন্য ক্রেতা বা ক্লায়েন্ট একটি উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় যেকেউ অংশগ্রহণ করতে পারে এবং ক্রেতার নির্দেশনা অনুযায়ী ডিজাইনাররা ডিজাইন তৈরি করে। এতে সহজে নিবন্ধনের মাধ্যমে নির্দেশনা অনুযায়ী ডিজাইন তৈরি করতে হয়।
শুরু করতে পারেন নিজেই
গ্রাফিক ডিজাইনে দক্ষ, এমন ব্যক্তিরা নিজেরাই শুরু করে দিতে পারেন গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০ জনের একটি দল নিয়ে নিজেই শুরু করতে পারেন এই কাজ। দক্ষ জনবল ছাড়াও এ কাজে প্রয়োজন হবে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সংযোগ। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কম্পিউটারের থাকতে হবে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা। আর এ সাথে সাথে শুরুতেই তৈরি করে নিতে হবে একটি ওয়েবসাইট। মুক্ত পেশাজীবীদের কাজের মধ্যে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। আর নিজেদের মানসম্পন্ন কাজ বিক্রি করার সুযোগও রয়েছে উপযুক্ত মূল্যে।
সময় এগিয়ে যাওয়ার
পেশা গড়তে গ্রাফিক ডিজাইন বেশ সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র। দেশে কিংবা দেশের বাইরে কাজ করার ক্ষেত্র থাকায় এতে সহজে ভালো করা যাবে এবং নিজেকে গড়ে তোলা যাবে নিজের মতো করে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এ কাজটি সহজে করা সম্ভব বলে যে কেউ নিজের আগ্রহের মাধ্যমে এ কাজে যুক্ত হতে পারেন। যথেষ্ট সম্ভাবনাময় এ খাতে কাজের ক্ষেত্রও বাড়ছে ধীরে ধীরে। এখন প্রয়োজন নিজেকে কাজের সঙ্গে তৈরি করে নেওয়া। তাহলে সহজেই লক্ষ্য
অর্জন সম্ভব।
গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ওয়েবসাইট
www.psdtuts.com
www.psdfan.com
www.pslover.com
www.nettuts.com
www.photoshopstar.com
www.good-tutorials.com
www.psdvibe.com
www.tutorialized.com
www.actionfx.com
www.photoshoproadmap.com
www.pixel2life.com
www.totaltutorials.com
www.deviantart.com
www.teamphotoshop.com
www.photoshoptopsecret.com
www.planetphotoshop.comSource: http://goo.gl/CM7RcU