অফিস গসিপে কান দেবেন না
সামান্য পরচর্চার ফল যে এত মারাত্মক হয়ে দাঁড়াবে, কে জানত! অন্যান্য দিনের মতো সে দিন সকালে অফিসে পৌঁছে চা খেতে খেতে রুবানার সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল মিশু। স্বামীর অফিসের চাপ, ছেলের পড়াশোনা, দেশের রাজনৈতিক হাল-হকিকতের চর্চা করতে করতে কখন যে অজান্তে বলে ফেলেছে সহকর্মী টুশির বাড়ির নানা অশান্তির গল্প, তা সে নিজেও জানে না। মিশুর কলেজের বন্ধু টুশি। তাকে খুব বিশ্বাস করেই বাড়ির ঝামেলার কথাগুলো বলেছিল। মিশু এ ব্যাপারে খুব সহানুভূতিশীল। নিতান্তই গল্পচ্ছলে রুবানাকে সে ব্যাপারটা জানিয়েছিল। কিন্তু খবরটা যে রুবানা দাবানলের মতো পুরো অফিস ছড়িয়ে দেবে তা ওর কল্পনারও অতীত ছিল। এর ফল বোঝা গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। ঘণ্টা দুয়েক পর যখন টুশির কানে খবরটি পৌঁছল তখন ডিপার্টমেন্টের সবার সামনে সে যা নয় তাই বলে গেল মিশুকে। তা কান্নাভেজা মুখটা দেখে মিশু ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিল, অন্যের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তার অজান্তে চর্চা করে নিতান্তই অপরাধ করে ফেলেছে। টুশি তো তার সঙ্গে কথা বন্ধ করল, সেই সঙ্গে অন্য অনেকেই বেশ সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে মিশুকে। এ ঘটনার পর থেকে একেবারে লজ্জায় মিইয়ে গেছে মিশু। টুশির কাছে যে গিয়ে ক্ষমা চাইবে, সে সাহসও আর অবশিষ্ট নেই। বুঝতেই পারছেন, মিশু নিজের অজান্তেই অফিস গসিপের (বাংলায় যাকে বলে পরনিন্দা, পরচর্চা) শিকার।
অফিসে যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য যে কাজ করা তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু কাজের ফাঁকে ফাঁকে, ভাব বিনিময়ের মাঝে, লাঞ্চ আওয়ারে, চায়ের আড্ডায় সহকর্মীদের মধ্যে একটু-আধটু গসিপ হয়েই থাকে। এরকম গসিপ মানেই অন্যকে নিয়ে তার আড়ালে চর্চা করে যাওয়া। অন্যকে নিয়ে কথা বলা অপরাধ না হলেও, অফিসে গসিপ করার সময় মনে রাখুন কিছু পরামর্শ।
যা করবেন
আড্ডা দেওয়ার সময় ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকার কারণে কখনও নির্বিচারে কুত্সা ছড়াবেন না। অন্যের নিন্দা করলে, নিজেরও নিন্দার শিকার হতে বেশি দেরি হয় না। সে জন্য সহকর্মী, ঊর্ধ্বতন বা অধস্তন কারও সম্বন্ধে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করার আগে বিবেচনা করুন।
সহকর্মীদের মধ্য থেকে বন্ধু চিনে নিন। শুধু কমন ইন্টারেস্ট থাকাটাই কিন্তু এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। সুসমপর্ক রাখার চেষ্টা করুন সবার সঙ্গে। কিন্তু যারা বেশি কথা চালাচালি করেন, অন্যের কৃতিত্ব নিজে নিতে চান, তাদের এড়িয়ে চলাই মঙ্গল।
প্রত্যেক অফিসের একটা নিজস্ব ওয়ার্ক কালচার থাকে, যেটা আপনার মনমতো নাও হতে পারে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য নিয়মের মতো এই নির্দিষ্ট ওয়ার্ক কালচার মেনে চলাটাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যদি আপনার মনে হয়, এই ওয়ার্ক কালচারে কোনো বড়সড় গলদ আছে, যা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করছে, তাহলে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে গসিপ না করে সরাসরি কর্তৃপক্ষকে জানানোই ভালো।
একসঙ্গে কাজ করতে গেলে মতানৈক্য দেখা দিতেই পারে, ছোটখাটো গোলমাল কথাবার্তার মাধ্যমে সমাধান করুন। তবে এসব সামান্য মনোমালিন্য যেন পরে গসিপের মাধ্যমে কুিসত রূপ না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।Source: http://goo.gl/66zwlr