'সাফল্যের জন্য প্রয়োজন দায়িত্ববোধ এবং কাজের প্রতি ভালোবাসা'
(http://www.ittefaq.com.bd/admin/news_images/2013/01/03/thumbnails/image_8310.jpg)
হাবিবা নাসরিন রিতা। ডিরেক্টর, অপারেশন হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নিজের প্রতিষ্ঠান ইউনিক বিজনেস সিস্টেমসকে। বাবার হাত ধরেই অনেকটা আগমন ব্যবসায়। তবে তারপর থেকে নিজের মেধা ও দক্ষতার মাধ্যমেই নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নারী উদ্যোক্তা এবং নেতৃত্ব হিসেবে খুব অল্প যে কয়েকজন আমাদের দেশে আইটি কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। তার আজকের যে অবস্থান, তার পেছনের কিছু কথা তার সাথে সাক্ষাত্কার নিয়ে এই লেখায় জানাচ্ছেন তরিকুর রহমান সজীব
'ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল স্বাধীনভাবে নিজে কিছু করার। প্রথাগতভাবে সকলের মতো চাকরিনির্ভর হয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাইনি কখনও। কাজকে ভালোবাসতাম সবসময়। আর স্বাধীনভাবে কাজ করার চিন্তাই মাথার মধ্যে ঘুরত। চাকরি করতে গেলে কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয় বলেই মনে হত। তাই ব্যবসাকেই নিজের কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছি। নিজের মেধা আর শ্রম দিয়ে গড়তে চেয়েছি নিজের মতো করে ক্যারিয়ার, সেই সাথে অন্যদের জন্যও কাজের সুযোগ করে দিতে চেয়েছি। আর তার সূত্রেই যা কিছু অর্জন আমার', বলছিলেন আইটি কোম্পানি ইউনিক বিজনেস সিস্টেমের ডিরেক্টর, অপারেশন হাবিবা নাসরিন রিতা।
ব্যবসার সাথে হাবিবা নাসরিনের সম্পর্কের সূত্রপাত খুব অল্প বয়সেই। বাবার হাতে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান ইউনিক বিজনেস সিস্টেমে যাতায়াত ছিল স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। কথায় কথায় জানালেন, এসএসসি পরীক্ষার পর থেকেই বাবার সাথে অফিসে যাতায়াত করতেন তিনি। এই সময়টাতে বাবাকে অফিসের নানা কাজে সহায়তা করতেন তিনি। কখনও হয়ত বাবার হয়ে কোনো নোট নিতেন, কখনও অফিসের প্রতিবেদন তৈরিতে একটু হাত দিতেন, কখনও অফিসে অন্যদের কাজেও সহায়তা করতেন। এভাবেই ব্যবসার সাথে জড়িত হওয়ার ইচ্ছেটা জোরালো হয়ে ওঠে। সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেন তখনই। আর তাই এইচএসসি'র পর তিনি পড়ালেখা করেন বিবিএ নিয়ে। পরে নেদারল্যান্ডের মাসট্রিস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএও করেন। পড়ালেখা শেষেই যোগ দেন কাজে।
রিতা জানালেন, 'আমি ইউনিক বিজনেস সিস্টেমে যোগ দেওয়ার পরেই কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসি। কেবল ব্যবসার খাতিরে ব্যবসা নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা ব্যবসার কৌশল নির্ধারণ করতে শুরু করি। ইউনিক বিজনেস সিস্টেমস শুরু থেকেই বাংলাদেশের বাজারে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর বাজারজাত করে আসছে। আমি সময়ের চাহিদার কথা মাথায় রেখে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে আরও বেশি গুরুত্ব প্রদান করি। সময়ের সাথে সাথে অফিস-আদালত থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ব্যবহার শুরু হয়েছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের। সেই দিক বিবেচনা করেই আমরা প্রজেক্টরে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করি। আর এর পরে আমরা ইন্টার্যাকটিভ হোয়াইট বোর্ডও দেশের বাজারে নিয়ে আসি। শিক্ষা ব্যবস্থায় এই মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং ইন্টার্যাকটিভ বোর্ড আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে সক্ষম বলেই আমরা বিশ্বাস করি।'
বাংলাদেশের আইটি কোম্পানিগুলো মূলতই হার্ডওয়্যার নিয়ে কাজ করে থাকে। এ প্রসঙ্গে হাবিবা নাসরিন তাদের পরিকল্পনাটির কথা জানান। তিনি বলেন, 'আমরা কেবল ইন্টার্যাকটিভ বোর্ড বাজারে নিয়ে এসেই থেমে থাকতে চাই না। বোর্ডগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার থাকলে তবেই তা কার্যকর হয়ে উঠবে। আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, এই বছরেই আমরা স্কুলের জন্য নিয়ে আসা বোর্ডের উপযোগী সফটওয়্যার তৈরি করব। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে প্রাথমিকভাবে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত যাবতীয় পাঠ্যপুস্তকের ডিজিটাল সংস্করণ তৈরি করে আমরা প্রদান করব বোর্ডগুলোর সাথে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম প্রকৃত অর্থেই ইন্টার্যাকটিভ হয়ে উঠবে। আমাদের শিশুরাও আনন্দের সাথে শিক্ষালাভ করতে পারবে।'
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারীদের জন্য সাধারণত শিক্ষকতা বা চিকিত্সা পেশাকেই আদর্শ মনে করা হয়। আইটি বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে মেয়েদের তেমন একটা উত্সাহিত করা হয়না। ফলে এই সেক্টরে মেয়েদের উপস্থিতি একদমই কম। সেক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে, এমন প্রশ্ন করতে রিতা বলেন, 'আমার ক্ষেত্রে বলতে গেলে কোনো সমস্যায় পড়তেই হয়নি। ইউনিক বিজনেস সিস্টেমস-এর হয়ে যখনই কোনো ক্রেতা বা সরবরাহকারীর সাথে যোগাযোগ করেছি, তখন ইউনিক বিজনেস সিস্টেমস-এর একজন কর্মী হিসেবেই মূল্যায়িত হয়েছি, আলাদা করে নারী কর্মী হিসেবে নয়। অনেক সময়ে অফিসে অধস্তন অনেকের মাঝেই বস হিসেবে মেনে না নেওয়ার কিছু প্রবণতা থাকলেও নিজের কাজ দিয়েই নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করেছি। আর সে কারণেই কোথাও আটকে যাইনি।' নিজে নারী হয়ে মেয়েদের আইটিতে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানালেন তিনি। তার ভাষায়, 'আমাদের দেশে আইটি খাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আর তাই এই খাতে ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। আমি আমার প্রতিষ্ঠানে আসার পর মেয়েদের কিছুটা অগ্রাধিকার দিয়েই নিয়োগ দিয়েছি। এবং তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজে নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছে। আমার পরিচিত অন্য নারীরাও যারা নিজের প্রতিষ্ঠানে নারীদেরই নিয়োগ দিয়েছেন, তারাও মেয়েদের কাছে ভালো পারফরম্যান্স পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে বলা যায়, মেয়েদের জন্য এই খাতে সম্ভাবনা রয়েছে অনেক বেশি।' একইসাথে মেয়েদের এগিয়ে আনার জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন হাবিবা নাসরিন।
সামনের দিনগুলে নিয়েও হাবিবা নাসরিনের রয়েছে পরিকল্পনা। আগামী দিনে গিয়ে কেবল প্রযুক্তি পণ্য বা সেবা আমদানীই নয়, নিজেরা প্রযুক্তি উদ্ভাবনের স্বপ্ন দেখেন। তিনি বলেন, 'আমরা কেবল অন্যের উপরে নির্ভর হয়েই থাকতে চাইনা। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে উপকৃত হতে পারে, তার জন্য নিজেরাই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে চাই। প্রযুক্তি বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তার সাথে তালমিলিয়ে চলতে চাই আমরাও।'
সবশেষে বললেন নিজের সাফল্যের মূলমন্ত্র। মেধা, শ্রম আর নিষ্ঠাই তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে। তার ভাষায়, 'যেকোনো কাজেই সফল হওয়ার জন্য দায়িত্ববোধ আর কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। দায়সারাভাবে কাজ করলে কোথাও উন্নতি করা যাবে না। সত্যিকারের সাফল্য লাভ করতে চাইলে কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে।'Source: http://goo.gl/5iXRH3