Skill Jobs Forum

News Portal Career Article => Education => Topic started by: mostafijur15-7863 on August 14, 2018, 05:05:57 PM

Title: আমার কি সিএসই পড়া ঠিক হবে - কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার আগে যা জানা উচিত ?
Post by: mostafijur15-7863 on August 14, 2018, 05:05:57 PM
তোমরা হয়তো কলেজের গণ্ডি পার হয়ে যাচ্ছো। অনেকেই এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছো অথবা পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়ে গেছে। তোমাদের জন্যই আজ এই ব্লগপোস্টটি লেখা। এসময়ে অনেকেই তাদের স্টাডি লাইফ নিয়ে সাজেশন চায়। কে কোন বিষয়ে পড়বে, কোথায় পড়বে- এসব নিয়ে খুব চিন্তায় থাকে। আমার এই পোস্টটি মূলত যারা মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছো কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়বে তাদের জন্য। যারা পড়া শুরু করে দিয়েছো তারাও দেখে নিতে পারো।

এখন বাংলাদেশের সাবজেক্টগুলোর মধ্যে একটি হট সাবজেক্ট হলো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং। আগে সবাই হুড়মুড় করে বিবিএ পড়তো। এখন সবাই দল বেধে ঢুকে যায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। তবে কোন চিন্তাভাবনা না করেই ট্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে এই সাবজেক্টটি পড়তে গেলে ভয়ানক সমস্যায় পড়ে যেতে পারো। আগে বুঝতে হবে তোমার জন্য কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াটা ঠিক হবে কিনা। নাহলে সামনে প্রচুর বিপদ। কোন ধারণা না নিয়েই সিএসই পরতে গেলে হয়তো তোমার পাশ করতে চার বছরের জায়গায় আট বছরও লেগে যেতে পারে। হয়তো তুমি পড়াশোনা মাঝপথে ছেড়ে দিতে পারো। আগে বিষয়টার ধারণা পরিষ্কার করতে হবে। তারপর কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসইতে ভর্তি হবে।

সিএসই পড়ার আগে এরকম কয়েকটা বিষয় জানা প্রয়োজন। সেগুলোই সংক্ষেপে বলছি আমি। এখানে আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভালো বা খারাপ সিএসই এর জন্য এসব কিছুই বলবো না। সেটা তুমি নিজে ঠিক করে নিবে। এখানে আমি তোমাকে একটা ধারণা দিবো যে সিএসই পড়তে চাইলে তোমার আসলে কি কি জানা উচিত, যা থেকে তুমি বুঝতে পারবে যে সিএসই পড়াটা তোমার জন্য ঠিক হবে কিনা। লেখাটা খানিকটা বড়। আশা করি ধৈর্য্য ধরে সবটুকু পড়বে।

ভালোবাসতে হবে প্রযুক্তিকে

তুমি সিএসই পড়লে তোমাকে নিত্যনতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে। সুতরাং প্রযুক্তির প্রতি তোমার ভালোবাসা জন্মাতে হবে। এর মানে এই নয় যে তোমার হাই-পার্ফোরমেন্স পিসি লাগবে, স্মার্টফোন লাগবে, ম্যাকবুক লাগবে। তোমাকে প্রযুক্তির নতুন নতুন আপডেটগুলো জানতে হবে। পত্রিকার প্রযুক্তির পাতাটি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতে হবে। ইন্টারনেটে ফেসবুকিং ও গেইম খেলার পাশাপাশি প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল পড়তে হবে। ইন্টেল কখন নতুন প্রসেসর বের করলো, কোন কোম্পানীর স্মার্টফোন এই বাজেটে ভালো হবে, অ্যাপলের নতুন অপারেটিং সিস্টেমের নাম কি – এইসব টুকিটাকি ব্যাপারগুলো নিয়ে আপডেটেড থাকতে হবে।

মনে রাখবে এখনকার যুগে যার কাছে যত বেশি ইনফোরমেশন আছে সে তত দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে। এভাবেই তোমার প্রযুক্তির প্রতি একটা ভালো লাগা তৈরী হবে। সিএসই নিয়ে ৪-৫ বছর পড়ার সময় এই প্রযুক্তি নিয়েই থাকতে হবে। তাই একে ভালোবাসা ছাড়া গতি নাই। প্রযুক্তিকে বিরক্ত লাগলে তোমাকেও বিরক্ত লাগবে কম্পিউটার সায়েন্সের।

সিজিপিএ সব নয়, তবে অনেককিছু

আমি জানি অনেকেই শুনেছো সিএসই পড়লে শুধু স্কিল থাকলেই চলে, সিজিপিএ দরকার নাই। এবং আমি এও জানি এ কথাটা সত্য বটে। তুমি ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে অনেক বড় ভাই-আপুকেই বলতে শুনবা যে সিজিপিএ দিয়ে কিচ্ছু হবে না।

হ্যা, সিএসই এমন একটা বিষয় যেটা শুধু একাডেমিক পড়াশোনার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না। তোমার যদি সিজিপিএ কম থাকে কিন্তু স্কিল বেশি থাকে তবে তুমি সহজেই চাকরী পাবা। বিদেশের কোম্পানীগুলো তো বটেই, বাংলাদেশের অনেক সফটওয়্যার কোম্পানীই এখন সিএসই গ্রাজুয়েটদের সিজিপিএকে তেমন একটা পাত্তা দেয়না। পাত্তা না দেওয়ার যথেষ্ট কারন রয়েছে। অনেকেই দেখা যায় ভালো সিজিপিএ এর অধিকারী কিন্তু এমন কোন কাজ জানেনা যেটা তাদের কোম্পানীতে কাজে লাগে। স্বাভাবিকভাবেই একটা কোম্পানী চাইবে কাজ জানা লোক নিতে। এতে তাদের কোম্পানীরই লাভ হবে। তাই শুধু কম সিজিপিএ কেন, টেক কোম্পানীতে এমন অনেক লোকই দেখবে যাদের কম্পিউটার সায়েন্স বা কোন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রীই নেই। কিন্তু তাদের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্কিল। অনেক বছরের পরিশ্রমে নিজ চেষ্টায় তারা এ পর্যায়ে পৌছাতে পেরেছে।

এখন স্কিলওয়ালা মানুষ, মার্ক জাকারবার্গ, বিল গেটস এদের উদাহরণ একটু সাইডে রেখে তোমার উদাহরনে এসো। তুমি এইচএসসি পাশ করেছো। এখন তুমি ৪ বা ৫ বছরের জন্য সিএসই পড়বে। সিএসই পড়ো আর যাই পড়ো না কেন তোমাকে পাশ করে বের হতে হবে। বেশিরভাগ ভার্সিটিতে পাশ করতে হলেও মিনিমাম সিজিপিএ ২.৫ লাগে। তুমি না চাইলেও এই সিজিপিএ তোমাকে তুলতেই হবে।

এবার আসো চাকরীর ইন্টারভিউ বোর্ডে। তোমরা তিন বন্ধু মিলে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছো একটি সফটওয়্যার কোম্পানীতে। তোমার সিজিপিএ ২.৫। তোমার বন্ধু মিলনের সিজিপিএ ৩.৮। মিলন সারা ভার্সিটি লাইফ শুধু পড়াশোনা করেই কাটিয়েছে। পড়াশোনার বাইরে সে তেমন কিছুই জানেনা। আবার রাতুলের সিজিপিএ ৩। সে মোটামুটি পড়াশোনা করেছে আবার পড়াশোনার পাশাপাশি কিছুদিন একটা কোম্পানীতে পার্ট টাইম জব করেছে, তার কিছু ভালো ভালো প্রজেক্ট করা রয়েছে।

ইন্টারভিউতে প্রথমেই বাদ দেওয়া হবে মিলনকে। কেননা মিলনকে দিয়ে কোম্পানীর কোন কাজ নেই। খুব সম্ভবত তাকে একটা কাজ ধরিয়ে দিলে সে নিজে নিজেও শিখে নিতে পারবেনা। তার জ্ঞান ঐ ভার্সিটির চার দেয়ালের ক্লাসরুম আর টিচারদের রুম পর্যন্তই। আর কোন কোম্পানীই চায় না একজনের পেছনে সারাক্ষন শিক্ষকের মত লেগে থাকতে।

তোমার সিজিপিএ তেমন ভালোনা। আবার তোমার পূর্বের রেকর্ড বলছে তুমি ভালো
কোন প্রজেক্ট করোনি, কোন চাকুরীর পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই- সব মিলিয়ে তেমন কোন স্কিলও নেই। সুতরাং তুমিও বাদ পরে যাবে হয়তো।

বাকি থাকে রাতুল। রাতুলের সিজিপিএ হয়তো মিলনের মত এত ভালোনা। সে অনেক কষ্টে টেনেটুনে অন্তত সিজিপিএ ৩ তুলেছে। কিন্তু তার পূর্বের অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে কাজ জানে অলরেডি। তাকে নিয়ে কোম্পানীর লাভ আছে। রাতুলকে একটু আধটু কাজ বুঝিয়ে দিলেই সে বাকিটা করে ফেলতে পারবে। আর ৪-৫ বছর সে ভার্সিটিতে পড়েছে। সিজিপিএ মোটামুটি ভালোই। এ থেকে তারা বুঝে নিবে যে রাতুল পোলাটা আর যাই হোক ফাঁকিবাজ নয়। এত স্কিল ডেভেলপ করার পরও সে ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছে সুতরাং কোম্পানীর প্রজেক্টের কাজ সে যত ঝামেলাই থাকুক ঠিক সময়ে শেষ করতে পারবে। নিতান্ত বেকুব না হয়ে থাকলে রাতুলকে তারা চাকরী অবশ্যই দিবে।

উপরের উদাহরণ থেকে আশা করি বুঝতে পেরেছো সিজিপিএ কতটা প্রয়োজন আর কতটা অপ্রয়োজনীয়। আরেকটি কথা হলো তোমার টার্গেট যদি থাকে দেশের বাইরে স্কলারশিপ নিয়ে পড়ালেখা করার তাহলে তোমাকে সিজিপিএ অবশ্যই ভালো রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে তোমার স্কিল কম থাকলেও চলবে। তবে সিজিপিএ মাস্ট ভালো লাগবে। এছাড়াও ভালো কিছু রিসার্চ পেপার ও প্রোজেক্ট পাবলিশ করলে ভালো হবে ভার্সিটি লাইফেই।

গণিত যে পিছু ছাড়বেই না

ম্যাথে খুব দূর্বল হয়ে থাকলে সিএসই পড়ার প্রথমেই তুমি একটা বড়সড় ধাক্কা খাবে। এটা অনেকেই বলে না। কিন্তু আমি বলছি গণিত তোমার পিছু ছাড়বেই না।

প্রতিটা ইউনিভার্সিটিতে সিএসই এর কোর কোর্সের পাশাপাশি ম্যাথের কিছু কোর্স থাকে। এগুলোতে ভালো মার্ক পেতে হলে তোমার ম্যাথের ব্যাসিক মোটামুটি ভালো থাকতে হবে। এছাড়াও সিএসই এর সাবজেক্টগুলোতেও ম্যাথ লাগে। তবে সেটা আহামরি কোন ম্যাথ না। তোমার ম্যাথের বেসিক ভালো থাকলেই তুমি সেগুলো পারবে।

তুমি যদি ম্যাথে খুব দূর্বল হয়ে থাকো তাহলে আজই খান একাডেমী থেকে অনলাইনে ক্লাস নাইন-টেনের ম্যাথগুলো করা শুরু করে দাও। সেগুলো শেষ হলে এইচএসসির কিছু ইম্পরট্যান্ট ম্যাথ আবার করো। আর অনলাইনে কুইজ দিয়ে নিজেকে যাচাই করো। ভার্সিটি লাইফে তোমার ইন্টিগ্রেশন-ডিফারেন্সিয়েশন খুব লাগবে। এগুলোর একদম ব্যাসিক তুমি ভালো করে এখনই শেখা শুরু করে দাও।

শুধু আচ্ছা আচ্ছা করে গেলেই হবে না। আজই শেখা শুরু করে দাও। ভার্সিটির ক্লাস শুরু হলে এই ব্যাসিক শেখার কোন সময় পাবেনা। আর টিচারেরাও একদম ব্যাসিক ম্যাথ হাতে ধরে শেখাবে না। ম্যাথ ও লজিকের ব্যাসিক ভালো করার জন্য তোমার মোবাইলে গুগল প্লেস্টোর অথবা অ্যাপলের অ্যাপস্টোর থেকে কিছু ম্যাথ গেমস ডাউনলোড দিয়ে খেলা শুরু করো। এটা চটপট অংক করতে খুব কাজে দিবে।

যেদিকেই যাও না কেন প্রোগ্রামিং লাগবেই

আমাদের সবার একটা ভুল কনসেপ্ট হলো – আমরা মনে করি সিএসই পড়ে সবাই প্রোগ্রামার হয়। সিএসই একটা বিশাল পড়াশোনার ক্ষেত্র। তোমার ভার্সিটি লাইফে এই সিএসই পড়ে যা কিছু নিয়ে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব তার সব কিছুরই এক চিমটি করে ব্যাসিক শিখিয়ে দেওয়া হবে। সিএসই পড়ে কেউ প্রোগ্রামার হয়, কেউ ডেভেলপার হয়, কেউ সফটওয়্যার টেস্টার হয়, কেউ ডাটা সায়েন্টিস্ট, কেউ বা আবার হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়। আবার ডেভেলপার হয় অনেক রকমের – গেইম ডেভেলপার, ওয়েবসাইট ডেভেলপার, অ্যাপস ডেভেলপার ইত্যাদী। তুমি অনেক দিকেই যেতে পারো ক্যারিয়ার গড়ার জন্য।

তবে এই প্রোগ্রামিং জিনিসটা তুমি যেদিকেই যাও না কেন লাগবেই। তোমার ভার্সিটির প্রথম সিএসই কোর্স পাশ করতে প্রোগ্রামিং শেখা লাগবে। এই প্রোগ্রামিং আবার অন্যান্য কোর্সের সাথে লিংক করা। সেসব কোর্সে তোমাকে আর প্রোগ্রামিং এর ব্যাসিক শেখানো হবে না। তোমাকে সেই কোর্সে যা পড়ানো হবে সেটা প্রোগ্রামিং থেকে একদম বাইরের একটা বিষয়। কিন্তু কোর্স শেষে যে প্রজেক্ট দেওয়া হবে দেখবে সেখানে দেখবে প্রোগ্রামিং করা লাগছে। তাই শুরুতেই প্রোগ্রামিংয়ে ভালো হলে তোমার জন্য এই পথটা পাড়ি দেওয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে।



source:http://raiyadraad.blogspot.com/2017/07/before-studying-cse.html