Skill Jobs Forum

News Portal Career Article => Career / Job News => Topic started by: Monirul Islam on July 31, 2018, 03:05:40 PM

Title: হতাশ হলে কী করব
Post by: Monirul Islam on July 31, 2018, 03:05:40 PM
'হতাশা' শব্দটার সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। দেশের তরুণদের ভাবনা জানতে প্রথম আলোর উদ্যোগে ওআরজি-কোয়েস্ট গত মার্চে সারা দেশে জরিপ করেছে। সেখানে উঠে এসেছে আমাদের দেশের ৮২ শতাংশ তরুণ নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাহলে তাদের দিনের একটা সময় নিশ্চয়ই কাটে হতাশায়? হতাশ হলে তারা কী করে? আপনিই-বা কী করেন?

কারও বিশেষ কারণে হতাশ লাগে। কারও কারণ ছাড়াই হতাশ লাগে। হতাশ হলে দেখা যায়, অনেকেই আবার পছন্দ করে খাওয়াদাওয়া। 'হতাশ হলে খিলগাঁও, বেইলি রোডের দিককার রেস্টুরেন্টগুলোতে চলে যাই, পকেটে যা টাকা আছে তা সব খরচ করে খেয়ে আসি', বলেছেন সাদ। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগে পড়ছেন তৃতীয় বর্ষে। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অমিতেরও একই কথা। তিনি নাকি হতাশ হলে শুধু বার্গার খান। কিন্তু দুজনের হতাশ হওয়ার কারণ কিন্তু এক নয়। সাদ হতাশ হন, কারণ তিনি তাঁর নিজের জীবন নিয়ে খুশি নন। তাঁর জীবনে অনেকবার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে অমিত একজনকে পছন্দ করেন, তাঁর কথা ভাবলে নাকি হতাশ লাগে।

এই কাউকে পছন্দ করতাম, কাউকে ভালোবাসতাম, তাঁর কথা মনে পড়লে হতাশ লাগে, এই দলে আছি আমরা অনেকে। এই দলে প্রীতিও আছে, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে পড়ছেন। হতাশা ভর করলে ছবি আঁকেন, বই পড়েন। মোদ্দা কথা, নিজেকে ব্যস্ত রাখেন।

চারপাশের অনেককেই আমরা বলতে শুনি, তাঁর মনে হচ্ছে, তিনি তাঁর নিজের সম্ভাবনাটুকু ব্যবহার করতে পারছেন না, নিজের প্রতিভাটা কাজে লাগাতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন কিন্তু ক্লাস করছেন না নিয়মিত, এই শিক্ষাব্যবস্থাটাই তাঁর পছন্দ নয়। তাহমিদ নাকি হতাশ হলে শান্তি খোঁজেন বিখ্যাত মনীষীদের জীবনী পড়ে। তখন ভাবেন, তাঁরা পারলে তিনি নিজে পারবেন না কেন?

প্রান্ত বুয়েটে পড়ছেন, তাঁর আশপাশের সবাই নাকি অনেক জ্ঞানী, গুণী। তিনি ভাবেন, তাঁর জীবনে কিছু অর্জন করা দরকার। এই ব্যাপারটা নাকি তাঁকে হতাশ করে। আর হতাশ হলে চোখ-মুখ গুঁজে রাখেন বইয়ের পাতায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন কেউ নতুন ভর্তি হন, তখন যেতে হয় সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিবেশে। অনেকে আছেন, যাঁদের খাপ খাওয়াতে একটু কষ্ট হয়ে যায়, অনন্যা তেমন একজন। পড়ছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। অন্য কারও সঙ্গে নাকি তাঁর সহজে মেলে না, হতাশ হয়ে পড়েন। মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে হতাশা কাটান। হতাশা কাটানোর ক্ষেত্রে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলা অনেক ক্ষেত্রেই সহায়ক, প্রিয় মানুষ হতে পারেন আপনার বন্ধু, প্রেমিকা, বাবা-মা।

আমাদের সবার মাঝেই একধরনের আত্মপ্রত্যাশা আছে, নিজের কাছে অনেক কিছু আশা করি আমরা। নায়লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। হতাশ হলেই বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। যেসব কথা কাউকে বলার মতো নয়, সেগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। হতাশা নাকি তাঁর জন্য 'পাওয়ার বুস্টার' হিসেবে কাজ করে, তাঁর মাঝে জিদ আনে। হতাশ হলে মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়েন, ঘুম থেকে নতুন একটা হতাশাহীন সকাল পান।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, হতাশ হলে মানুষের মাঝে নিরাশা তৈরি হয়, আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায়, তাই আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে, যে কারণটাতে আমরা হতাশ হচ্ছি, তা কি আসলেই এত হতাশাজনক? অন্য সবার জীবনে কি ঘটছে না? নাকি আমরা নিজেরাই একটু বেশি ভাবছি। তারপরেও যদি এই পরিস্থিতি কাটানো সম্ভব না হয়, তাহলে আমাদের একটু বাস্তববাদী হওয়া উচিত। পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই আছে থাকবে, যা আমরা পাইনি, পাব না।

আমাদের বরং ব্যাপারটা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত, কেন ব্যাপারটা এমন হলো অনুসন্ধান করে ভবিষ্যতে যাতে আর এমনটা না হয়। আমাদের নিজেদের আপন মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাদের সঙ্গে আমাদের কথা শেয়ার করা উচিত। হতাশাটাকে মোকাবিলা করা উচিত।

এ ধরনের মানুষদের প্রতি তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষকদের বেশি নজর দেওয়া উচিত। কেউ কেউ আছেন, খুব অল্পেই হতাশ হয়ে পড়েন, দুরবস্থা বেশি সহ্য করতে পারেন না। আর অনেকে আছেন, দুর্যোগের পর সহজে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেন না। তাঁরা সহজে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছেন। কারও যদি ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন থাকে, তাঁর অবশ্যই উচিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করা।

সূত্র: প্রথম আলো