(http://cdn-rr1mu0hhwzsuhkwd.stackpathdns.com/media/imgAll/2016October/bg/satalite-bg20180517063236.jpg)
মহাকাশে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে 'বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১'। আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে স্যাটেলাইটটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উৎক্ষেপণের চারদিন পর বুধবার (১৬ মে) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উত্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলো। গুগল ইমেজে দেখা গেছে স্যাটেলাইটটি আফ্রিকার গায়ানার উপর দিয়ে অতিক্রম করছে।
স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণকারী একটি ওয়েবসাইটে রাত ৯টার দিকে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সমুদ্র তীরবর্তী গায়ানা অতিক্রম করে উত্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে নির্দিষ্ট পথে এগোচ্ছে। এসময় ৬ দশমিক ৫৪ ডিগ্রি অক্ষাংশ এবং -৫৭ দশমিক ৯৯ দ্রাঘিমাংশ বরাবর অবস্থান করছে। স্যাটেলাইটের ইমেজে স্যাটেলাইটের অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও স্পস্ট দেখা যাচ্ছে।
এটি নাইজেরিয়া-কেনিয়া-ভারত মহাসাগর-পাপুয়া নিউগিনির উপর দিয়ে ফিলিপাইন হয়ে কক্ষপথে আসবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের জন্য রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অরবিটাল স্লট লিজ ইন এর ভিত্তিতে ক্রয় করা হয়। এই কক্ষপথেই স্যাটেলাইটটি প্রদক্ষিণ করবে।
স্যাটেলাইট পরিচালনায় নিয়ন্ত্রণে থাকা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বুধবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, কক্ষপথে পৌঁছতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগবে। কক্ষপথে পৌঁছানোর পর স্যাটেলাইটটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্দিষ্ট পথে এগোচ্ছে। কক্ষপথে পৌঁছানোর পর আগামী তিন মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করবে।
সরকার বলছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য এবং বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। সরকার আশা করছে, বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ যে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সেই অর্থ সাশ্রয় হবে।
এছাড়া এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) সেবা, স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সম্প্রচার এবং ইন্টারনেট সুবিধাসহ ৪০টি সেবা পাওয়া যাবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শুধু বৈদেশিক মুদ্রাই সাশ্রয় হবে না, সেই সঙ্গে অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটান এর মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর আয় হবে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বর্তমানে সম্প্রচার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে গবেষণার কাজের জন্য বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে এক কোটি ৪০ লাখ ডলার (১১৮ কোটি টাকা) গুণতে হয়। স্যাটেলাইট কাজ শুরু করলে বিদেশি স্যাটেলাইট নির্ভরতা কাটিয়ে উঠে অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পেছনে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। ১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বিদেশি চুক্তি এবং বাকি প্রায় এক হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় 'স্যাটেলাইট সিস্টেম' কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকায় 'স্যাটেলাইট সিস্টেম' কিনতে ফ্রান্সের থ্যালেস এলিনিয়া স্পেসের সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে অর্থায়নের জন্য এইচএসবিসি ব্যাংকের সঙ্গে গতবছর প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার।
ফ্রান্সের থ্যালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণ শেষে পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও হস্তান্তরের পর বিশেষ কার্গো বিমানে করে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের কেপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠানো হয়।
গত ১২ মে রাতে কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।
বিটিআরসি জানিয়েছে, স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায়।
Source:- http://www.banglanews24.com/information-technology/news/bd/653834.details#2