(http://www.alokitobangladesh.com/uploads/news/age.jpg)
ক্যারিয়ার' শব্দটা খুবই ভারি আর গাম্ভীর্যপূর্ণ। তবু এ বিষয়ে আমরা অনেক সময় কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিই! কারও পরামর্শ চাইলেও তারা কিছু ধারণাকে পুঁজি করেই পরামর্শ দেন। যেমনÑ এখন দেশের ব্যবসায়িক অবস্থান ভালো, বিবিএটা পড়লে ভালো করতে পারবে কিংবা কম্পিউটার তো মানুষের ঘরে ঘরে, কম্পিউটার নিয়ে পড়লেও ভালো চাকরি পাবে অনায়াসে। আমাদের অনেকের মতেই স্মার্ট ক্যারিয়ার মানেই চাকরি। এর বাইরে যে সম্মানজনক আরও অনেক ক্যারিয়ার রয়েছে, তা আমরা যেন জানিই না!
সবার কথা শুনে যখন একটা ক্যারিয়ার পথ বেছে নিই, দেখা যায় সে কাজ করতে গিয়ে আর ভালো লাগছে না। ক্যারিয়ার হয়ে পড়ে বোঝা। গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকায় একজন মানুষ গড়ে তিনবার তার ক্যারিয়ার পথ পাল্টায়। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা চাইলেও সম্ভব হয় না। কারণ আমরা শুধু একটা কাজের জন্যই তৈরি হই। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের এটাই শেখায়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় ৮৯ শতাংশ মানুষই তাদের চাকরি পছন্দ করে না এবং তারা পরিবর্তন করতে চায়।
সমাধানের পথ
এ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হলে শুরুতেই নিজের ক্যারিয়ার নির্বাচনে সচেতন হতে হবে এবং সে হিসেবে নিজেকে তৈরি করার প্রস্তুতি নিতে হবে। চলুন, সে পথে হাঁটিÑ
মাধ্যমিক থেকেই শুরু
ক্যারিয়ার প্লানিং শুরু করা উচিত মাধ্যমিক বা তারও আগে থেকে। তখন থেকে রিসার্চ করা উচিত কোন ফিল্ডের ডিমান্ড ৪-৫ বছর পর অনেক ভালো থাকবে, সে ফিল্ডে যে কাজ করতে হবে, সেসব কাজে আগ্রহ আছে কিনা, কাজগুলো পছন্দ কিনা। তারপর ভাবতে হবে সে কাজ করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায়ও কিছু শেখানো হচ্ছে কিনা। সে কাজ করতে হলে যা যা শেখা দরকার, তা শিখতে হবে।
আয়টাও জরুরি
ক্যারিয়ার বলতেই আমরা অর্থ উপার্জনের মাধ্যমকে বুঝি। লেখাপড়া শেষ করে একটা ভালো বেতনের চাকরি পেতে হবেÑ এটাই অনেকের একমাত্র ভিশন। যদিও ক্যারিয়ার নির্বাচনে সবচেয়ে জরুরি বিষয় এটি নয়, তবে দায়বদ্ধতার কারণে এটা আগে ভাবতে হয়। যে ফিল্ডগুলোর ডিমান্ড ৪-৫ বছর পরেও বাড়বে, সেগুলোর দিকে নজর দেওয়াই শ্রেয়। এটা জানার জন্য নেটে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন খবর, প্রতিবেদন পড়তে পারেন। বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে করতে পারেন মনোনিবেশ।
বিকল্প ক্যারিয়ার
শিক্ষাজীবনে আমাদের খুব কমই জানানো হয় যে, ক্যারিয়ারমাত্রই চাকরি নয়। উদ্যোক্তা হওয়া, ফ্রিল্যান্সার, স্বাধীন-কনসালট্যান্ট হওয়া এ রকম আরও অনেক ক্যারিয়ার পথ আছে। উদ্যোক্তা হলে নিজের কাজের স্বাধীনতা যেমন থাকে, তেমনি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়।
অন্য পথ
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টারÑ এসব ছাড়াও ইদানীং কিছু ক্যারিয়ার পথ তৈরি হয়েছে, যাতে অনেকেই সফল হচ্ছেন। যেমনÑ ফটোগ্রাফি, ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মেকআপ আর্টিস্ট, স্টাইলিস্ট, ক্যারিয়ার গ্রুমিং, করপোরেট ট্রেইনার, পাবলিক স্পিকার, ফ্যাশন ডিজাইনিং, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ফিল্ম মেকিং, ইউটিউবিং, ব্লগিং ইত্যাদি। এসব বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার খুব একটা সুযোগ বাংলাদেশে নেই। তবে এসব ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক শিক্ষার চেয়েও ব্যবহারিক বা প্র্যাকটিক্যালি শেখার প্রয়োজনীয়তা বেশি।
যেটি ভালো লাগে
ক্যারিয়ার শুরুর পর 'কাজ ভালো লাগে না' রোগে ভুগতে না চাইলে প্রথমেই ভাবা উচিত কী ভালো লাগে। পাশাপাশি এ-ও দেখুন, সে কাজটিকে আসলে সিরিয়াস ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া যায় কিনা বা এটা প্রচলিত কিনা। ধরুন আপনি আঁকতে পছন্দ করেন। খুব ভালো আঁকেন। তাহলে আপনার জন্য ফ্যাশন ডিজাইনিং বা অন্যান্য ডিজাইনিংয়ের ক্যারিয়ার ভালো হবে।
অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু
চাকরির আগেই অভিজ্ঞতা অর্জন জরুরি। এতে একসঙ্গে দুটো কাজ হয়Ñ একে তো চাকরির জন্য সিভি ভারি করার অভিজ্ঞতা পেয়ে যাবেন, সঙ্গে আপনার নির্বাচিত ক্যারিয়ার পথটি আসলেই আপনার জন্য কিনা তা বুঝতে পারবেন। ধরুন আপনি ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজেকে গড়তে চান। তাহলে পড়াশোনাকালে কোনো ইলেকট্রনিক কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করার চেষ্টা করুন অথবা ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন কম্পিটিশনÑ যেখানে ইলেকট্রনিক্স নিয়ে কাজ করতে হয় সেখানে অংশগ্রহণ করুন। এভাবে কাজ করার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন আপনি এ কাজে আনন্দ পাচ্ছেন কিনা। তা না হলে পরিবর্তনের পথে হাঁটুন।
দক্ষতার বালাই
এখন ক্যারিয়ারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর সার্টিফিকেট অনেকটা এন্ট্রি-টিকিট হিসেবে ব্যবহার হয়। বাকি পুরোটাই নির্ভর করে দক্ষতার ওপর। দেশের একজন নামকরা সফটওয়্যার প্রোগ্রামার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছিলেন, দেশের অনেক বড় বড় ব্যাংকের উচ্চপদস্থ ব্যাংকার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করা। তাই আপনার হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ইউটিউবে হাজারো এক্সপার্টের পরামর্শমূলক টিউটোরিয়াল আছে, হাজার হাজার বই আছে, যা পিডিএফ ফরম্যাটে ডাউনলোড করা যায়।
আর প্র্যাকটিস করুন। একাগ্রতা থাকলে আপনি সফল হবেনই।
নিজেকে নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করুন এবং প্লান অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করুন। দেশের সমস্যা নয়, সম্পদ হিসেবে ক্যারিয়ারের পথে নামুন।
Source:-http://www.alokitobangladesh.com/online/details/29297