সবসময় শুনে এসেছি, প্রফেশনাল মানেই খারাপ লোক। নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না। আসলে আমরা প্রফেশনাল শব্দটার মানে ঠিকমতো জানি না বা বুঝি না। এই বিভ্রান্তিটা মধ্যবিত্ত সমাজে একটু বেশিই চালু রয়েছে। অথচ সারা দুনিয়ায় সত্যিকারের প্রফেশনাল-এর কদর বেশি।
প্রফেশনাল হওয়ার জন্য তেমন কোনো রুল বা ফর্মুলা নেই। তবে কতগুলো গুণ ও ব্যবহারের ঠিক ঠিক ব্যালান্স যদি নিজের মধ্যে তৈরি করা যায় তাহলেই সত্যিকারের প্রফেশনাল হয়ে ওঠা যায়। অবশ্য প্রফেশনাল হওয়ার সব স্কিল যে তৈরি করা যায় এমন নয়। শিক্ষা-দীক্ষা, সর্বোপরি, ব্যবহার- এসবের মধ্যে নিহিত থাকে প্রফেশনাল হওয়ার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো- এসব গুণ বলেন, ব্যবহার বলেন, ভিতরের মানুষটার মধ্যেই থাকে, সেই ছেলেবেলা থেকেই। কেবল সেটাকে সচেতনভাবে চিনে নিতে হয়। আমরা তো দোষ-গুণ মিলিয়ে মানুষ, তাই সবার মধ্যে সব গুণ বজায় থাকবে এমনটা ভাবা অন্যায়। তবে জীবনের মূলনীতি ঠিক থাকলে, বাকি গুণগুলো আয়ত্ত করা কেবল সময় ও পরিশ্রমের ব্যাপার। আর নিজেও অন্যদের প্রতি সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
আমরা আসলে প্রফেশনাল মানে বুঝি, পেশাদারি জগতে ঢুকে পড়ার কতগুলো নির্দিষ্ট ব্যবহার। যেমন ১০-৫টা পর্যন্ত অফিস সময়ে সীমাবদ্ধ। হয়তো আগেকার দিনে এমন ব্যবহার করলে চলত। কিন্তু এখন সবকিছু বদলেছে। তাই নিজের মধ্যের মানুষটাকে একটু সচেতনভাবে উত্তরণের পথে নিয়ে যাওয়া জরুরি। প্রফেশনাল হওয়া মানে কিছু ব্যবহারের প্রতি অনুগত থাকা। সেটা ব্যক্তিগত বা পেশাদার জীবন হোক। যদি সেই কোয়ালিটিগুলো নিজের মধ্যে গেঁথে নেওয়া যায় তাহলে ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনটা অনেক স্বচ্ছভাবে যাপন করা যায়। কতটা ইন্টেগ্রিটি, দায়িত্ববোধ, কাজের প্রতি শ্রদ্ধা, সেল্ফ অ্যাওয়ারনেস- এসব প্রশ্ন যাচাই করতে যাওয়া বোকামি। এই গুণগুলো নিজের মধ্যে সচেতনভাবে অনুশীলন করা জরুরি। একজন সত্যিকারের প্রফেশনাল হয়ে ওঠার জন্য যেমন নীতি, সততা দরকার, তেমনই দরকার জেদ, পরিশ্রম আর কাজটা করে যাওয়ার নিষ্ঠা এবং ধৈর্য। যদি নীতি, সততা, ইন্টেগ্রিটি- এসব গুণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা আপনার নিজের মধ্যে তৈরি হয় বাকিটা সহজেই আয়ত্ত করতে পারবেন। তবে কয়েকটা গুণের কথা বলতে পারি যেগুলো বৃহত্তর জীবনে আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। যেমন- নিজের সম্পর্কে ঠিক ধারণা। আপনি কতটা পারেন সে ব্যাপারে একবার নিজেকে যাচাই করে নিন, পথ চলতে সুবিধা হবে। কাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায়।
কিছু টিপস
*নিজের সম্পর্কে দ্বিধা রাখবেন না।
*নিজের সম্পর্কে নিজের একটা অ্যানালিটিক্যাল মন তৈরি করুন। নিজেকে ফাঁকি দেওয়ার চেয়ে বড় অপরাধ কিছু হয় না।
*অন্যের কাছ থেকে সাহায্য নিন। এতে লজ্জার কিছু নেই।
*অন্যের সঙ্গে তুলনা করে মন খারাপ করা ঠিক নয়।
*ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটা বাস্তব ধারণা পোষণ করার চেষ্টা করুন।
*টাকাই সব নয়, এক্সিলেন্সের পেছনে দৌঁড়ান।
*সমালোচনায় ভেঙে না পড়ে তার থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
*যে কোনো কাজে নিজ থেকেই এগিয়ে যাওয়া ভালো। প্রোঅ্যাক্টিভ হওয়াটা জরুরি। নিজের দায়িত্ব নিজে নিন। পারলে অন্যকে সহযোগিতা করুন।
এটা নিশ্চয়ই এ টু জেড তালিকা নয়। এ ছাড়াও জীবনের অনেক দিক আছে, যেগুলো নিয়ে চলতে পারলে জীবনটা সম্পূর্ণ হয়। পাশাপাশি বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠুন প্রফেশনাল।
C: বাংলাদেশ প্রতিদিন