যে ভুলগুলো সুযোগ দূরে ঠেলে দেয়(http://www.ittefaq.com.bd/admin/news_images/2014/01/02/thumbnails/image_98041.jpg)
নতুন বছরে নতুন করে ক্যারিয়ারের ভাবনা ভাবতে শুরু করেছেন অনেকেই। বিশেষ করে যারা ক্যারিয়ার শুরু করতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য নতুন বছরের শুরুটা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে তৈরি হতে হবে ক্যারিয়ারের জন্য। আর সেটা করতে গিয়ে কিছু ভুল কখনই করা যাবে না। এমন কিছু ভুলের কথাই জানাচ্ছেন সানজিদা সুলতানা
নতুন বছরের শুরুর সময়টা তরুণদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যারা এখনও ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেননি বা সবেমাত্র ক্যারিয়ার শুরু করেছে কিন্তু তা মনের মতো হয়নি, তাদের নতুন বছরে শুরু থেকেই মনোযোগী হতে হবে।
ভালো একটি ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য নিজের যোগ্যতা এবং দক্ষতার প্রয়োজন সর্বাগ্রে। তবে এসব যোগ্যতা এবং দক্ষতার বাইরেও রয়েছে কিছু বিষয়। নিজের জীবনবৃত্তান্ত বা রিজিউম এবং কভার লেটার একজন চাকরিপ্রার্থীর নিজেরই উপস্থাপন। তাছাড়া চাকরির বিজ্ঞাপনকে সঠিকভাবে পড়তে পারাও বড় একটি গুণ। এসব বিষয়ে প্রচলিত কিছু ভুল করে থাকে অনেকেই। এই ভুলগুলো ক্যারিয়ার গড়ার পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়। তাই চাকরিপ্রার্থী এবং নবীন পেশাজীবীদের জন্যই এই লেখায় সেসব ভুলের কথা তুলে ধরা হলো।
জীবনবৃত্তান্তের ছোট ছোট ভুল
একটি জীবনবৃত্তান্তই মূলত প্রার্থীকে প্রথম চাকরিদাতার কাছে তুলে ধরে। তাই জীবনবৃত্তান্তকে যতটা সুন্দরভাবে তৈরি করা যায়, ততই ভালো। সেক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগী হতে হবে।
জীবনবৃত্তান্তে উল্লিখিত প্রতিটি তথ্যই যেন পর্যাপ্ত হয়, সেদিকে নজর রাখুন। অনেকেই নিজের জীবনবৃত্তান্তে অসম্পূর্ণ তথ্য সংযোজন করে থাকে, যা চাকরিদাতার বিরক্তি উত্পাদনের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং সেই প্রার্থীর জন্য তা ভালো ফল বয়ে আনে না। তাই জীবনবৃত্তান্তে যে তথ্যগুলো সংযোজন করবেন, সেগুলোর পূর্ণতার দিকে খেয়াল রাখুন। যেমন, পরীক্ষার ফলাফলের ক্ষেত্রে ডিগ্রির নাম, ফলাফল, অধ্যয়নের মূল বিষয়, প্রতিষ্ঠান এবং উত্তীর্ণের বছর উল্লেখ করুন। বিশেষ কোনো প্রাপ্তি থাকলে সেটিও বিস্তারিত তুলে ধরুন।
একজন চাকরিপ্রার্থীর বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম তার যোগ্যতাকে বাড়িয়ে তুলে ধরে চাকরিদাতার কাছে। কাজেই সামাজিক-সাংস্কৃতিক বা অন্য কোনো ধরনের 'এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজে'র অভিজ্ঞতা গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরুন। সেক্ষেত্রে প্রতিটি অভিজ্ঞতাকে এমনভাবে উপস্থাপন করুন যেন সেটি পড়ামাত্রই বুঝা যায় আপনি প্রকৃতপক্ষে কী করেছেন।
চাকরিদাতার নিকট সবসময়ই প্রার্থীর অভিজ্ঞতা গুরুত্ব পেয়ে থাকে। তাই কোনো চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা যদি আপনার থেকে থাকে, তাহলে সেটাকেই প্রাধান্য দিয়ে জীবনবৃত্তান্তে এগিয়ে রাখুন। অনেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত সব তথ্যেরও পরে যুক্ত করেন অভিজ্ঞতা। এটি একদমই ভুল। শুরুতেই অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরুন। একাধিক অভিজ্ঞতা থাকলে সকলেই সর্বশেষ অভিজ্ঞতার কথাই আগে উল্লেখ করে থাকেন। তবে কাঙ্ক্ষিত চাকরির সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো অভিজ্ঞতা থাকলে সবার আগে সেটাকেই উপস্থাপন করা উচিত। তাহলে সেটা চাকরিদাতার মনোযোগ বেশি আকর্ষণ করবে।
জীবনবৃত্তান্ত তৈরির ক্ষেত্রে জটিল ধরনের ফরম্যাট পরিহার করুন। অনেক বেশি ডিজাইন বা গ্রাফিক্সের ব্যবহারেরও প্রয়োজন নেই। সাধারণ সিভি তৈরির জন্য পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাই সবচেয়ে ভালো। তবে সময়ের সাথে তালমিলিয়ে এখন মাল্টিমিডিয়া সিভির প্রচলন রয়েছে। সম্ভব হলে নিজের জন্য এমন একটি মাল্টিমিডিয়া সিভি তৈরি করে নিন।
কভার লেটারের খুঁটিনাটি
সিভি'র পরেই একজন চাকরিদাতার কাছে প্রার্থীর প্রতিনিধি হয়ে হাজির হয়ে থাকে একটি কভার লেটার। যে কারণে কভার লেটারটিও অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে থাকে। একটি সিভিতে মূলত প্রার্থীর বিভিন্ন তথ্যের সাধারণ উপস্থাপন থাকে। সেখান থেকে কভার লেটারে এসে মূলত একজন প্রার্থী নিজের যোগ্যতাগুলোকে যৌক্তিকভাবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়।
কভার লেটারে মূলতই চাকরির জন্য প্রার্থী কতটা যোগ্য এবং কেন যোগ্য, সেই কথাগুলো লিখতে হয়। পাশাপাশি কভার লেটারে প্রার্থীর লেখার ধরণ এবং মানসিকতার পরিচয়ও পাওয়া যায়। ফলে কভার লেটার মূলতই প্রার্থীর বক্তব্য হয়ে হাজির হয় চাকরিদাতার কাছে।
কভার লেটারের গুরুত্ব বুঝেই এটি নিয়ে নানা ধরনের মতামত প্রচলিত রয়েছে। তবে কভার লেটারকে কখনই খুব বেশি বড় হতে দেওয়া যাবে না। অনেক বড় কভার লেটার চাকরিদাতাকে ক্লান্ত করে তুলতে পারে। তাছাড়া সংক্ষেপে সব তথ্য তুলে ধরতে পারাকে সবাই-ই বড় একটি গুণ বলে মনে করেন। আর কভার লেটার লিখতে গিয়ে যতটাসম্ভব প্রাঞ্জলতা বজায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে অহেতুক অপরিচিত শব্দ এবং বাক্যের গঠন ব্যবহার পরিহার করতে হবে। সহজ শব্দে এবং সহজ সহজ কৌশলের বাক্য দিয়ে কভার লেটার সাজানেই হবে বুদ্ধিমানের পরিচায়ক।
চাকরির বিজ্ঞাপনে মনোযোগ
অনেকেই অনেক অনেক চাকরিতে আবেদন করলেও সেখান থেকে ডাক আসে না। এর মূল কারণই হলো আপনার জন্য উপযুক্ত চাকরিতে আবেদন না করা। আসলে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে আবেদন করলেই কেবল ডাক মিলবে। কোনো চাকরির জন্য আপনি কতটা উপযুক্ত সেটা কিন্তু নির্ধারণ করতে হবে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখেই। তাই চাকরির বিজ্ঞাপন সঠিকভাবে পড়তে হবে।
চাকরির বিজ্ঞাপন পড়ার সময় প্রথমেই খেয়াল করুন শিক্ষাগত যোগ্যতা কী চাওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে কি না, সেদিকেও নজর দিন। তবে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে চাকরির বিবরণ বা 'জব ডেসক্রিপশনে'। এই অংশে যে কাজগুলোর কথা উল্লেখ থাকবে, সেগুলো আপনি কতটা করতে পারবেন, সেটাই কিন্তু আপনার চাকরি পাওয়া বা না পাওয়ার মূল কারণ। কভার লেটারটি লিখতে গেলেও চাকরির বিজ্ঞাপনটি সঠিকভাবে পড়ে চাহিদাগুলো মিলিয়ে লিখতে হবে। তাই তাড়াহুড়ো করে বিজ্ঞাপন পড়ে না বুঝে আবেদন করবেন না।Source: http://goo.gl/6tfvB3