(http://paimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/640x360x1/uploads/media/2018/05/01/989691e08a2e689791a76727b452bd7e-5ae80ba245e52.jpg)
বাংলাদেশের তরুণদের একটি বড় অংশ বেকার। আবার তরুণদের একটি অংশ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলেও চাকরিটি তাদের পছন্দের নয়। অন্যদিকে দেশে বিদেশি কর্মজীবীর সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে তরুণদের কর্মযোগ্যতা, নিজেদের গড়ে তোলা এবং সর্বোপরি আগামী দিনের প্রস্তুতি কেমন হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল সোমবার প্রথম আলো অফিসে আয়োজন করা হয় তরুণদের নিয়ে এক বৈঠকের। ক্রাউন সিমেন্ট-প্রথম আলো তারুণ্যের জয়োৎসব আয়োজনে অংশ নেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা।
বৈঠকে তরুণদের দায়িত্বশীল হওয়ার পাশাপাশি সুন্দর সমাজ গড়তে দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানানো হয়। তরুণদের জন্য কর্মক্ষেত্র বাড়ানো এবং পছন্দের পেশায় উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন পর্যায় থেকে সহযোগিতা করার ওপর জোর দেওয়া হয়।
বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদুর রহমান বলেন, 'ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় কোম্পানি গবেষণায় অর্থ ব্যয় করছে। আমাদের দেশে এই প্রবণতা দেখা যায় না। আমাদের তরুণদের জন্য কর্মক্ষেত্র বাড়ানো ও উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করতে দেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।'
চালডাল ডট কমের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জিয়া আশরাফ তরুণদের নিজের কাজ সম্পর্কে জানার পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, চাকরি বা উদ্যোগ—দুই ক্ষেত্রে দক্ষতাই মূল বিষয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাওহিদা জাহান তরুণদের জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্ল্যাটফর্মটি এমন হবে, যেখানে তরুণেরা পড়াশোনা থেকে শুরু করে চাকরি-ক্যারিয়ার নিয়ে সব ধরনের প্রশ্ন করতে পারবেন এবং বিশেষজ্ঞরা সরাসরি যেন তাতে উত্তর দিতে পারেন।
জুমশেপারের প্রধান নির্বাহী কাওসার আহমেদ বলেন, 'পেশাগত জীবনে তরুণদের দায়িত্বশীল হতে হবে। ব্যক্তিগত জীবনে নিজের দক্ষতা বিকাশেও মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে প্রতিশ্রুতি রক্ষার সংস্কৃতি গড়ে তোলায় মনোযোগী হতে হবে।'
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিপাশা মতিন বলেন, তরুণদের পথ দেখানোর দায়িত্ব রয়েছে সমাজ, অভিভাবক ও শিক্ষকদের। হতাশ ও শ্রেণিকক্ষের পেছনে বসা শিক্ষার্থীদের মেন্টরিংয়ের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
বর্তমান তরুণদের নানামাত্রিক সমস্যা নিয়ে তরুণেরা নিজেদের ভাবনার কথা জানান বৈঠকে।
ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের শিক্ষার্থী লুবাবা মাইশা বলেন, 'আমাদের মা-বাবা ও পরিবারের লোকজনদের তরুণদের ওপর চাপ দেওয়া কমাতে হবে। চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হওয়ার জন্য স্কুল থেকে চাপ দেওয়ার মানসিকতা বন্ধ করতে হবে।'
ওয়ার্ক ফর আ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সৈয়দ সাইফুল আলম জানান, যাঁরা এগিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের পাশাপাশি অসফল তরুণ কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাঁরা কিছু করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের জন্যও সমন্বিত কিছু করা প্রয়োজন।
টেন মিনিট স্কুলের আয়মান সাদিক তরুণ ও পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত করার উপায়ের কথা বলেন।
তারুণ্যের জয়োৎসব
তারুণ্যের জয়োৎসব
বৈঠকে অংশ নেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক কাজী হাসান রবিন, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বুশরা হুমায়েরা, আলোকচিত্রী প্রীত রেজা, কুইন্স ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ডবিজয়ী সাজিদ ইকবাল, গ্রিন সেভার্সের উদ্যোক্তা আহসান রনি, স্থপতি ফারহানা রশীদ, এমআইটি গ্র্যাজুয়েট তামান্না ইসলাম, ব্র্যাক সোশ্যাল ইনোভেশন ল্যাবের আকিব মো. শাতিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের সভাপতি হালিমা আক্তার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের সভাপতি শাহিন আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্টারপ্রেনার্স ও ই-কমার্স ক্লাবের এস এম মুশফিকুল ইসলাম, তানজিম আমিন বোরহান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক ক্লাবের রাকেশ রায়হান, বিএনসিসি থেকে উৎপল চন্দ্র দাস, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সিএসই ক্লাবের সুমনা ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিয়া বিনতে আলমগীর, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মীর বুশরা বিনতে বাশার, আল ইহসান ক্যাডেট মাদ্রাসার তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
ক্রাউন সিমেন্ট গ্রুপের উপদেষ্টা এম এ মজিদ বলেন, তরুণদের কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য যোগাযোগ দক্ষতার ওপর জোর দিতে হবে এবং সততার সঙ্গে মানসম্মত কাজ করতে হবে। ভালো মানুষ হওয়া এবং দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাহলে এই সমাজ সুন্দর হবে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর যুব কর্মসূচি সমন্বয়ক মুনির হাসান। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, ক্রাউন সিমেন্টের উপমহাব্যবস্থাপক সারওয়ার আলম চৌধুরী প্রমুখ।