বর্তমানে দেশের আবাসন খাতে কী ঘটছে?
"আবাসন খাত কে কী দিতে হবে?"আবাসন খাতের বিশিষ্ট ব্যাক্তিত্ব, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি রূপায়ন এর উপদেষ্টা সাদাত হোসেন সেলিম এর সাক্ষাৎকার "নেক্সট স্টেপ" এ প্রকাশিত হয়েছে। নেক্সট স্টেপ এবং মিঃ সাদাত এর মধ্যকার সাক্ষাৎকারের সংক্ষিপ্তসার এখানে দেওয়া হলো।
বর্তমান আবাসন খাতের বাজার সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলা হলে সাময়িক স্থবিরতা সত্বেও মিঃ সাদাত আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন ঢাকা শহর প্রসারিত হচ্ছে এবং মানুষ উন্নত জীবন যাপনের খোঁজে ঢাকায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। শহরের এই রুপান্তরে ডেভলপারদের গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে হবে।
নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার ব্যাপারে মিঃ সাদাত বলেন, নতুন নতুন সিরামিক,ইট ইত্যাদি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে এবং নির্মান কর্মী ও প্রযুক্তিবিদদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও কঠিন প্রতিযোগিতার এই বাজারে আবাসন খাত প্রকৌশলী, স্থপতি ও ডিজাইনারদের জন্য ভাল প্লাটফর্ম তৈরী করে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ক্রমবর্ধমান এই খাত স্নাতকদের জন্য আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে যখন দেশে পাইপ, ফিটিংস তৈরীর নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থাকবে।
তিনি মতামত দেন যে সাধারণ জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে বসবাসের যায়গা দিতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এবং আবাসন চাহিদা পূরনে যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তিনি সুপারিশ করেন যে এপার্টমেন্ট এর মূল্য বৃদ্ধি রোধে সরকার সস্তায় জমি কিনে তা প্রাইভেট ডেভলাপারদের দিতে পারে যার ফলে আবাসন খাত আরও সাশ্রয়ী হবে। তিনি বলেন সরকারের সংশ্লিষ্টতার অভাব এদেশের আবাসন খাতের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা।
আবাসন খাতে সফল ব্যবসায়ী হওয়ার পেছনে মূল মন্ত্রের কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন এজন্য অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং মানুষ এর আশা আকাঙ্ক্ষা পূরন করতে হবে যার জন্য ক্রেতাদের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং বিশ্বস্ত থাকতে হবে।
স্থাপনা নির্মানের সময় পরিবেশ বিষয়ক বিবেচনার কথা জানতে চাইলে মিঃ সাদাত ভূমি দখলদার এবং ঢাকার হাউজিং প্রজেক্টের পরিকল্পনাহীনতার সমালোচনা করেন। স্থায়ী অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সরকারের প্রশংসা করেন যার ফলে ঢাকার আবাসন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ঢাকার বাইরে বসবাসের জন্য মানুষকে উৎসাহী করতে সরকারের জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন যা উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশও রক্ষা করবে বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।
রুপায়নের একজন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি মনে করেন ঢাকার বাইরে সমাজ তৈরিতে রুপায়ন উদ্যোগী ভূমিকা রেখেছে যা ঢাকাকে আরও বসবাস উপযোগী করবে ।তিনি অন্যান্যদেরও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
"আবাসন খাতে পুনর্জাগরনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে"এই লেখায় বাংলাদেশের বর্তমান আবাসন খাতের অবস্থা ফুটে উঠেছে যেখানে পুনর্জাগরনের লক্ষন দেখা দিয়েছে। আবাসন খাতের এই প্রতিক্ষেপনের পেছনের কারন গুলোর প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে দেশের আবাসন খাতের বর্তমান অবস্থার উপর রিহ্যাব এবং ডেভলপার কোম্পানির অভিজ্ঞদের মতামত দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের আবাসন খাতের পুনর্জাগরনের পেছনে তিনটি কারণ শনাক্ত করা হয়েছে যা হচ্ছে সম্পত্তির মূল্যে পরিবর্তন, হোম লোনে সাশ্রয়ী রেট এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।
রিহ্যাব এর সভাপতি মিঃ আলমগীর শামসুল আমিন আবাসন খাতের পুনর্জাগরন সম্পর্কে বলেন যে সুদের হার কমাটাই কারন।এই লেখা অনুযায়ী আবাসন খাতের স্থবিরতার জন্য দায়ী নিচের কারণ গুলোঃ
১. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা
২. স্বল্প ব্যাংক লোন
৩. স্টক মার্কেটে ধ্বস
৪. এবং নতুন স্থাপনায় গ্যাস সংযোগে সরকারী বাধা।
ইস্টার্ন হাউজিং এর মার্কেটিং ইনচার্জ মোহাম্মদ ফরহাদুজ্জামান ও ২০১৫ এর দ্বিতীয় ধাপ থেকে জুন পর্যন্ত বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন সুদের হার কমার কারণে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার আকৃষ্ট হয়েছে, উল্লেখ্য যে সুদের হার ১৭ থেকে ৯ এ নেমে এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে। তিনি আরও বলেন যে অনেক বিনিয়োগকারী আবাসন খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়েছেন কেননা অন্যান্য খাতে স্বল্প মুনাফা এবং ফিক্সড ডিপোজিটে কম লাভ এবং শেয়ার মার্কেটে ধ্বসের কারণে।
IDLC এর প্রধান নির্বাহী মিঃ আরিফ খান একমত হন যে হোম লোনের সহজলভ্যতা এবং স্বল্প সুদের হারের কারণে ফ্ল্যাট ক্রেতারা আগ্রহী হচ্ছে।
যাই হোক সাম্প্রতিক সময়ে গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই খাতের প্রবৃদ্ধি আবারও কমে যেতে পারে যেহেতু ক্রেতারা একটি স্থির মার্কেট ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতে ফ্ল্যাট কেনার কথা চিন্তা করে।
২০০৯-২০১০ সালে আবাসন খাত উত্থান দেখেছে, ২০০০ সালের দিকে অনেক ক্রেতারা ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়াতে বিনিয়োগ শুরু করে। যার ফলে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান মার্কেটে প্রবেশ করে এবং একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করে। যদিও শুরুর দিকে অনেক প্রজেক্ট বিক্রি হয় কিন্তু ২০১২ সালের দিকে বাজার স্থায়িত্ব হারায় যার পর ৩০-৫০ ভাগ বিক্রি কমে যায় এবং অনেক সংখ্যক ফ্ল্যাট অবিক্রিত রয়ে যায়।
সব শেষে বলা যায় আবাসন খাতে পূর্বের স্থবির অবস্থা থেকে আবার সুদিন ফিরে আসছে । যদিও সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটু নাজুক তবে নিম্নগামী সুদের হার আর হোম লোনের প্রাপ্যতার কারণে পরিস্থিতি আবাসন খাতের পক্ষেই রয়েছে।
http://www.btibd.com/real-estate-market-update-july-2016/