মিটিংয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে আমি
(https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/640x480x1/uploads/media/2015/10/28/2400dfe2f1377b0743ca8187d6c9b163-3.jpg)
কর্মক্ষেত্রে প্রতিদিন নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে নানা মিটিংয়ে সময় দিতে হয়। অফিসের মিটিং যেন অনেকের কাছে আতঙ্কের নাম। অঢেল অভিযোগ-ভয়ের কথা শোনা যায় মিটিংয়ের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে। অনেকেই অভিযোগ করেন, সভায় কেউ মনোযোগ দিয়ে কথা শোনেন না। যে বিষয় নিয়ে সভা তা নাকি গল্প করেই হারিয়ে যাই। কেউ কেউ একটু সরেস, মিটিং টেবিলে গেলেই নাকি তাদের নিদ্রা ডাক দেয়। কর্মক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিত্ব আর বুদ্ধিমত্তার জোরে যেকোনো মিটিংকেই নিজের দিকে নিয়ে আসা যায়, মন্ত্রমুগ্ধের মতো সবাইকে নিজের দিকে বেশি মনোযোগী করে তোলা যায়।
সভা তো বিমানবিদ্যা নয়কর্মক্ষেত্রের সভা তো রকেট সায়েন্স বা বিমান চালনার মতো কঠিন বিষয় না। রিডার ডাইজেস্ট সাময়িকীর একটি লেখায় মিটিংকে প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য নিজের ব্যক্তিত্বের সর্বোচ্চ ব্যবহারের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নৌকার মাঝির মতো, মিটিংয়ে আপনি ইচ্ছে করলেই নৌকা যেকোনো দিকে যেকোনো গতিতে নিয়ে যেতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের কিকর্প ব্যাংকের প্রধান ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা চার্লস হেইলের মতে, ফুটবল মাঠের অধিনায়কের মতো সভায় আপনাকে খেলতে হবে। অন্যদেরও খেলতে উৎসাহ দিতে হবে।
সভার আগে টুকরা পড়াশোনার দিকে নজর দিতে পরামর্শ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক সাইমুম হোসেন। তিনি জানান, আপনি যদি মিটিংয়ের হর্তাকর্তা ব্যক্তি হন, তাহলে মিটিং কোন বিষয়ে, কে কে অংশ নেবেন, কী আলোচনা হতে পারে, কী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তা নিয়ে মিটিংয়ের আগেই একটু অফিসেই 'বাড়ির কাজ' হিসেবে পড়াশোনা করে নিন।
ছোট করে ভেবে বড় সিদ্ধান্ত নিনকথায় বলে অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হয়, এমন অবস্থায় মিটিংয়ে কোনো সিদ্ধান্ত অংশগ্রহণকারী সবার ওপর ছেড়ে দিলে গাজন নষ্ট হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সাইমুম হোসেনের মতে, এসব ক্ষেত্রে আপনি অংশগ্রহণকারীদের সভায় আসার আগেই ই-মেইল বা চিঠির মাধ্যমে আলোচনার বিষয়বস্তুর সারমর্ম পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভেবে আসার পরামর্শ দিন। মিটিংয়ে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য ই-মেইলে মিটিংয়ের আলোচনার বিষয় আগেই পাঠিয়ে রাখুন।
বৈঠক-বইঠা নিজের হাতেই রাখুনসভায় অফিসের নানা পদের অনেক লোক অংশ নেন। ঊর্ধ্বতন কর্তা আর সহকর্মীদের নিয়েই মিটিংয়ে হয়তো মূল বক্তাই আপনি। এমন ক্ষেত্রে মিটিংয়ের নিয়ন্ত্রণ আপনার দিকে রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। রিডার ডাইজেস্ট এমন ক্ষেত্রে 'সরাসরি কিন্তু আধিপত্য-শাসন নয়' নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেয়। কলম্বিয়া বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক মাইকেল ফেইনারের মতে, 'আধিপত্য বা শাসন করার মনোভাব কেউ পছন্দ করেন না। কর্মক্ষেত্রে আপনি অন্যদের কাছে "অন্যের মিটিং"-এর পরিবেশ বদলে "আমাদের মিটিং", "আমার মিটিং" আবহে নিয়ে আসার দিকে গুরুত্ব দিন।' মিটিংয়ের আগে সবাইকে টুকিটাকি কাজ দিয়ে ব্যস্ত রেখে মিটিংকে প্রাণবন্ত করে তোলা যায়।
সবার অংশগ্রহণে মন দিনআপনি যদি সভার কর্তা হন, তাহলে সবাই যেন মনোযোগী হয়ে মিটিংয়ে অংশ নেন, সেদিকে গুরুত্ব দিন। হালকা মেজাজের পরিবেশে মিটিং করে বড় বড় সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দেয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট করপোরেশন। অন্যদিকে শীর্ষ ধনকুবের ওয়ারেন বাফেটের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের মানবসম্পদ বিভাগ যেকোনো মিটিংয়ে সবাইকে বক্তব্য রাখার দিকে গুরুত্ব দেয়। সবার
মতামত শুনুন।
নিজের মতামত দিন
আপনি কোন মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন, সেই পরিবেশে নিজের কথা বা মতামত থাকলে তা জানাতে ভুলবেন না। কথার জড়তা বা অস্বস্তি থাকলে তা নিয়মিত বই পড়া, জোরে জোরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথার চর্চার মাধ্যমে কাটাতে পারেন। যদি কোনো প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা থাকে মিটিংয়ে, তাহলে আগের দিনই তা তৈরি করে রাখুন। মিটিংয়ে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা নিজের ব্যক্তিত্ব আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কাটিয়ে উঠুন। মিটিংয়ের শুরুতে এক কাপ কফি খেয়ে নিজেকে প্রাণবন্ত করে অংশ নিতে পারেন রুদ্ধদ্বার যেকোনো বৈঠকে।
রিডার ডাইজেস্ট ও হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ অবলম্বনেSource: The Daily Prothom Alo