ঠিক সময়ে অফিসে যাওয়ার যুদ্ধ
সকালবেলা নাকি ঘড়ির কাঁটা একটু দ্রুত ছোটে। তাতেই নাকি অফিসে ঠিক সময়ে পা রাখতে হিমশিম খান অনেকে। এমন অভিযোগ রোজই করেন অনেকে। ঠিক সময়ে অফিসে যাওয়ার জন্য সেই সকালবেলা থেকে শুরু হয় আমাদের যুদ্ধ। নিজে তৈরি হওয়া, নাশতা তৈরি করা, বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছানোসহ হাজারো কাজ দিয়ে শুরু হয় আমাদের দিনটা। এর সঙ্গে বাস ধরার দৌড়, যানজট, বৃষ্টি-ঝড়-বাদলের বাধা তো আছেই। এসব যুদ্ধ শেষে ঘড়ির কাঁটা নির্দিষ্ট ঘরে যাওয়ার আগেই পা রাখতে হয় অফিসে। ওই সময়ের পরে অফিসে পা রাখলে শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। বসের কড়া চোখ, সহকর্মীদের হাসাহাসি আর মাস শেষে বেতন কাটার হুমকি তো আছেই। এত সব বিপত্তি পাশ কাটিয়ে একটু পরিকল্পনা করলেই ঠিক সময়ে অফিসে যাওয়ার অভ্যাস নিজের জীবনকেই বদলে দিতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক খায়ের জাহান বলেন, 'অলসতা হোক কিংবা যানজটের কারণেই হোক—প্রায় সবারই ঠিক সময়ে অফিসে না যাওয়ার জন্য অনেক বিপত্তিতে পড়তে হয়। ঠিক সময়ে না যেতে পারলে আপনার পেশাদারিত্ব আর দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন যে-কেউ। নিজের জন্যই আমাদের ঠিক সময়ে অফিসে যাওয়ার অভ্যাস রপ্ত করা উচিত। ঠিক সময়ে অফিসে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই, এটা নৈতিকতার বিষয়।'
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ সাময়িকীর মতে, যেসব কর্মী ঠিক সময় অফিসে যান, তাঁদের দায়িত্ববোধ দেরি করে যাওয়া কর্মীদের চেয়ে সাড়ে সাত গুণ বেশি হয়। ম্যানেজমেন্ট স্টাডি গাইডের হিসাবে, বিশ্বের ৮৪ শতাংশ সফল ব্যবসায় ব্যক্তিত্ব ঠিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে আসাকে সাফল্যের প্রথম সূত্র বলে মনে করেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের ৫০০টি বড় কোম্পানির সাফল্যের অন্যতম কারণ হচ্ছে কর্মীদের ঠিক সময়ে অফিসে আসার অভ্যাস।
(https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/640x361x1/uploads/media/2016/06/08/90e172e8796e91a47c1027178756bf52-Untitled-6.jpg)
ঠিক সময়ে অফিসে আসতে যা করবেন
* প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউর মতে, ভোরে ঘুম ভাঙার অভ্যাস যাঁদের, তাঁরা বড় কারণ ছাড়া দেরি করে অফিসে পৌঁছান না।
* প্রতি সকালে ব্যায়াম কিংবা জগিংয়ের অভ্যাস করুন, এতে শুধু মনই ফুরফুরে থাকে না। সারা দিন কাজে আগ্রহ পাবেন।
* প্রতিদিন সকালের জন্য একটি নিয়মিত রুটিন মনের মধ্যে গেঁথে ফেলুন। কতক্ষণে নাশতা করবেন, কতক্ষণে নিজে তৈরি হবেন, কতক্ষণে সন্তানকে তৈরি করবেন; তার অঙ্ক মাথায় রাখুন—এই হিসাব রাখলে অফিসে ঠিক সময়েই যেতে পারবেন আপনি।
* যানজটের কথা চিন্তা করে একটু আগে বাড়ি থেকে বের হোন। বাংলাদেশের রাস্তার যেহেতু যানজটের পূর্বাভাস পাওয়া যায় না, তাই প্রতিদিন হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে বের হোন।
* অফিসে যাওয়ার পথে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে পারেন। এই অভ্যাস আপনাকে অবচেতন মনেই প্রতিদিন সকালে কাজে আগ্রহী করে তুলবে।
* অফিস সময়ের আগে অফিসে এসে চা কিংবা কফি খাওয়ার দারুণ একটা অভ্যাস করতে পারেন।
* টাইমলি অ্যাপ, রেসকিউ টাইম, প্ল্যানার প্রো নামের অ্যাপ স্মার্টফোনে ব্যবহার করে সকালবেলা কী কী কাজ করবেন, তা আগের দিন ঠিক করে নিতে পারেন।
* অফিসে দেরি করে যাওয়ার জন্য কোনো অজুহাত দেওয়ার চেয়ে নিজেকে বদলানোর অভ্যাস করুন।
* অফিসে যাওয়ার পথে কোনো বিপদে পড়লে তা আপনার বসকে জানানোর অভ্যাস করুন। কর্তৃপক্ষকে ভুল কিছু ব্যাখ্যা করা থেকে বিরত থাকুন।
* প্রতিদিন রাতে আগামীকাল অফিসে কোন পোশাক পরে যাবেন, তা ঠিক করে নিন। প্রয়োজনে আয়রন করে রাখুন। পোশাক নিয়ে সকালবেলা তাড়াহুড়ো করবেন না।
* জুতা, মোজা বা কোন স্যান্ডেল পরে অফিসে যাবেন, তা আগের রাতে ঠিক করে রাখুন।
* নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। এতে আপনার মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সকালে ওঠার একটা অভ্যাস তৈরি হবে।
* প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার আগে সময় নিয়ে গোসল করুন। এতে সারা দিন মেজাজ ফুরফুরে থাকে। রাতে বাসায় ফিরেও গোসলের অভ্যাস করুন।
* নিয়মিত সকালে পেট পুরে হালকা নাশতা করার অভ্যাস করুন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সকালে নাশতা করার অভ্যাস করলে আপনার দিনটা বেশ ভালোই যাবে।
সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ম্যানেজমেন্ট স্টাডি গাইডNews Source: Daily Prothom Alo