চাকরি: লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে যা লাগে
কোনো লক্ষ্যবস্তুকে তির দিয়ে আঘাত করতে হলে আগে ধনুকের দড়ি পেছন দিকে অনেকখানি টেনে তারপর তির ছুড়তে হয়। রকেটের উৎক্ষেপণের জন্যও প্রয়োজন হয় পেছন দিয়ে জ্বালানি ধোয়া নির্গমন। এভাবে আমাদেরও লক্ষ্যে পৌঁছাতে, সামনে এগিয়ে যেতে দরকার হয় প্রবল মনোবল, যথার্থ প্রস্তুতি এবং সামনে এগোনোর গতি।
এগিয়ে যাওয়ার জন্য গতি তো অবশ্যই থাকতে হবে, ভারসাম্য যেন বজায় থাকে। এ জন্য আইনস্টাইনের সেই কথাটি মনে রাখতে পারেন 'জীবন বাইসাইকেল চালানোর মতো একটা ব্যাপার, পড়ে যেতে না চাইলে তোমাকে চলতে হবে'। ভারতীয় জনপ্রিয় লেখক ও 'থ্রি ইডিয়টস' সিনেমার কাহিনিকার চেতন ভগত এ বিষয়ে বলেছিলেন 'জীবনটা একটা মার্বেল দৌড়ের মতো; স্কুলে যেমন চামচ মুখে দিয়ে মার্বেল দৌড়ে অংশ নেওয়া হয়'।
আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারি—কথাটি পুরোনো হলেও অনেক ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। জীবনভর শুধু দৌড়ালেই সাফল্য ধরা দেয় না। বদ্ধ বৃত্তের মধ্যে এলোমেলো ঘুরপাক খেলে শুধু শক্তিই ক্ষয় হয়। বিশ্বখ্যাত মার্শাল আর্টিস্ট জর্জ পিরি এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন 'জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের সামনে একটা লক্ষ্য ঠিক করো, তারপর তার দিকে এগিয়ে যাও'।
লক্ষ্যপথে এগিয়ে যেতে অতিথি পাখির পরিভ্রমণ কৌশল লক্ষ করা যেতে পারে। অতিথি পাখির দীর্ঘ পথচলা পর্যবেক্ষণ করে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, পাখিরা দলবদ্ধভাবে ইংরেজি 'ভি' (v= victory) অক্ষরের মতো সজ্জিত হয়ে মেরু অঞ্চল থেকে উড়ে আসে। সামনে যে পাখিটা থাকে, তার পাখার স্পন্দন সঞ্চারিত হয় পেছনের অন্যান্য পাখিদের মধ্যে। এভাবে পুরো সারির কেউ যাতে ক্লান্তির কারণে দলছুট না হয়ে পড়ে, সে জন্য তারা স্থান পরিবর্তন করে। অনেকটা ম্যারাথনের রিলে দৌড়ের মতো!
ইন্টারভিউ শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়বেন না। জীবনব্যাপী এই রিলে দৌড়ে টিকে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য যেমন নিজস্ব তাড়না থাকতে হয়, তেমনি দরকার অন্যের প্রেরণা। ব্রুস লির এক ছাত্র প্রতিদিন তাঁর সঙ্গে তিন মাইল দৌড়াত। একদিন তিন মাইল পথ ছোঁয়ার পথে ব্রুস লি বললেন, চলো, আরও দুই মাইল দৌড়াই। তাঁর ছাত্র ক্লান্ত হয়ে পড়ে বলল, আরও দুই মাইল দৌড়াতে গেলে আমি মারা যাব। ব্রুসলি বললেন, তবে দৌড়াও। তাঁর সেই ছাত্র রেগে গিয়ে আরও পাঁচ মাইলের সীমা অতিক্রম করে ফেলল। এরপর ব্রুস লির কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে বসল ওই ছাত্র। ব্রুস লি তাকে বোঝালেন, 'থেমে যেতে বা মরে যেতে পারতে। কিন্তু যদি তুমি যা পারো, সেখানেই তোমার সীমা নির্ধারণ করে ফেলো, তবে তা সারা জীবনে তোমার ওপর প্রভাব ফেলবে। স্থিরতা আছে, কিন্তু সেখানে থেমে গেলে চলবে না।'
চলতে আমাদের হবেই। এ জন্য হয়তো মার্টিন লুথার কিং বলেছিলেন, 'যদি উড়তে না পারো, তবে দৌড়াও, যদি দৌড়াতে না পারো তবে হাঁটো, হাঁটতে না পারলে হামাগুড়ি দাও। যে অবস্থাতেই থাকো, সামনে চলা বন্ধ কোরো না।'
নাজমুল হুদা: পেশা পরামর্শক, লেখক ও উপপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক