ডেডলাইনের আগেই কাজ শেষ করার ৯টি সহজ উপায়!
(http://www.priyo.com/files/story/201309/5_sureshot_ways_to_meet_deadlines.jpg)
আপনি যে প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করেন না কেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই চাকুরিজীবীদের কিছু কাজ নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর করতে হয়। কিন্তু আমাদের মাঝে অনেকেই কিছুতেই নির্দিষ্ট সময়ে কাজটা করে উঠতে পারেন না। কাজ জমা দেবার সপ্তাহখানেক বা কয়েক দিন আগে শুরু হয় ছোটাছুটি। ডেডলাইনটা যাতে হাতের নাগাল থেকে কোনভাবেই ফসকে যেতে না পারে সেজন্যে শুরু হয় তাড়াহুড়া করে কাজ শেষ করার চেষ্টা। এর সাথে আপনি না চাইলেও যুক্ত হয় ভয়াবহ টেনশন, কাজের চাপ আর অস্থিরতা। প্রত্যেক চাকরিজীবীই এ ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জীবনে একবার হলেও হয়েছেন আর অনেকের কাছে এটা এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
এতো দৌড় ঝাঁপের পর যখন কাজটা ডেডলাইনের ভেতর বা পরে জমা দেয়া সম্ভব হয় তখন নির্ঘাত স্বস্তির পাশাপাশি এটাও আপনি ভাবেন যে- এমনটা আর কখনোই হবে না! কিন্তু আবার আপনার সাথে একই ঘটনা ঘটে। অনেক সময় হয়তো আপনাকে বাসায়ও কাজ নিয়ে আসতে হয় আর ক্ষতিগ্রস্থ হয় আপনার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক জীবনও!
এটা কিন্তু স্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়। বরং অনেকটা আপনার দোষও আছে এখানে! অথচ চাইলেই কিন্তু আপনি খুব সহজেই এ পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে পারেন। ভাবছেন, কিভাবে?
আপনারই জন্যে রইলো কিছু টিপসঃ
১)গুছিয়ে কাজ করুনঃ
একটু গুছিয়ে কাজ করুন। অনেকেই একসাথে অনেকগুলো কাজ নেন। এবং শেষ পর্যন্ত সবগুলোই থাকে শেষের পথে, কিন্তু শেষ করা আর হয়ে ওঠে না। হ্যাঁ, অনেক কাজের দায়িত্ব আপনার মাথায় থাকতেই পারে আর সেই কাজগুলো শেষ করতে হবে আপনাকেই। তাই কোন কাজটা কবের মধ্যে শেষ করতে হবে সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে লিখে রাখুন। চেষ্টা করুন সে সময়ের আগেই শেষ করার। আর কাগজপত্র এলোমেলো ভাবে না রেখে সপ্তাহে একদিন গুছিয়ে রাখুন। ফাইল বা ফোল্ডারের উপর লেবেলিং করে রাখুন। এতে প্রয়োজনীয় কাগজ কাজের সময় খুঁজে পেতে কষ্ট হবে না আর সময়ও নষ্ট হবে না।
২)সময় থাকতেই কাজ শুরু করুনঃ
?এক মাস তো অনেক সময়। এই কাজটা করা মাত্র ৩ দিনের ব্যাপার!? এভাবে ভাবছেন তো সেরেছে! হয়তো আপনার একটি কাজ শেষ করতে হবে এক মাসের ভেতর। আপনি হয়তো ভাবলেন, কাজটা করতে আপনার বড়জোর ৩ থেকে ৭ দিন লাগবে। কাজটা ফেলে রাখলেন। ৭ দিন আগে কাজটা হাতে নিয়ে দেখলেন এটা আসলে ততটা সহজ নয় যতটা আপনি ভেবেছিলেন। এক মাস আগে শুরু করা দরকার ছিল। ব্যস, রাতের ঘুম, দিনের অন্যান্য কাজ ফেলে লেগে যেতে হল ২৪ ঘন্টার বেগার খাটুনিতে! তাতেও হয়তো ডেডলাইন ধরতে পারবেন না আপনি। তাই সময় থাকতেই কাজ করুন। কাজটি করতে যদি আপনার ৭ দিনও লাগে তবু শুরু করুন এখনই! কাজ ফেলে রেখে নয়। কাজ সেরে বিশ্রাম নিন।
৩)কাজ ভাগ করে করুনঃ
কাজটা যদি বেশ বড়সড় হয় তাহলে কাজটাকে কয়েক ভাগে ভাগ করে ফেলুন। প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ করুন। তাহলে একঘেয়েমী পেয়ে বসবে না। আর এভাবে ধীরে ধীরে করলে আপনি কাজের মানটাও ধরে রাখতে পারবেন।
৪)টিম ওয়ার্ক এর যথাযথ ব্যবহার করুনঃ
যদি কাজটা করতে হয় টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে তবে সবার মাঝে কাজ ভাগ করে দিন। যে যেদিকে ভাল তাকে সেটা করতে দিন। কারো অংকের মাথা ভালো থাকলে তাকে হিসেব করতে দিন, কারো লেখালিখি বা ভাষাজ্ঞান ভালো থাকলে তাকে সাজিয়ে লিখতে দিন, কাউকে দিন অনুবাদের কাজ, এভাবে পুরো কাজটা একটু বুদ্ধি কাটিয়ে ভাগ করে দিতে পারলে কারো উপরই বেশী চাপ পড়বে না। কাজটাও শেষ হবে সময়ের অনেক আগেই!
(http://imgcdn.priyo.com/201309/39_14_68049_ac6dc58f670af705b1ac4f9bd80628d4_865a07_701.jpg)
৫)নিজেই একটি ডেডলাইন করুনঃ
ডেডলাইন তো অফিস থেকেই নির্দিষ্ট করা। কিন্তু নিজের জন্যে নিজে আরেকটি ডেডলাইন নির্দিষ্ট করুন। যা হবে মূল ডেডলাইন থেকে কমপক্ষে ৩ দিন আগের তারিখ। ক্যালেন্ডারেও এ তারিখটাই দাগিয়ে রাখুন। এতে আপনি সময়ের আগেই কাজ শেষ করে একবার ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে নিতে পারবেন যে কোন ভুল আছে কিনা। বা কোন কিছু সংযোজন-বিয়োজন করতে হবে কিনা! আর কোন কারনে এই ডেডলাইন ক্রস হয়ে গেলেও মূল ডেডলাইন ক্রস হবে না।
৭)টু ডু লিস্টঃ
একটা ?টু ডু লিস্ট? বা কাজের তালিকা করে ফেলুন। দৈনিক, সাপ্তাহিক ও এক মাস মেয়াদী। এতে আপনার করণীয় কাজগুলো লিখে ফেলুন। লাল কালির কলম দিয়ে লিখে রাখুন ডেডলাইন। যখন এ অনুযায়ী আপনি কাজ শেষ করতে পারবেন, দিনশেষে অফিস থেকে বেরুবার আগে ক্রস চিহ্ন দিয়ে কেটে দিন। বাকি কাজগুলো যেগুলো করা হয়নি, সেগুলো পরের দিন অফিসে এসেই করে ফেলুন। এভাবে কাজগুলোর কথা ভুলে যাবার অবকাশ যেমন পাবেন না, তেমনি দিন শেষে কাজ শেষ করার অন্যরকম তৃপ্তিতে ভরে যাবে আপনার মন! আর ডেডলাইন তো ছুঁতে পারবেন সহজেই!
৮)অফিসের সময়টাকে পুরোপুরি কাজে লাগানঃ
অফিসের সময়টাকে পুরোপুরি কাজে লাগান। এটা অনেক বড় বিষয়। তাই মাথায় রাখুন। অফিস চলাকালীন সময়ে ফেসবুক চ্যাটিং, জব সাইটে ঘোরা, ইন্টারনেট সার্ফিং বা পছন্দের কোন সাইটে গিয়ে ঘোরাঘুরি করার বদভ্যাস থাকলে সেটা আজই বাদ দিন। বাসায় যাবার পথে মোবাইলে বা বাসায় গিয়ে অবসরেও এগুলো করতে পারবেন। অফিসের সময়টাকে কাজে লাগান। সময়ের কাজ সময়ে করে নিশ্চিন্তে ফুরফুরে মনে বাড়ি ফিরুন। অফিসে ব্যক্তিগত কাজ করতে ভালো লাগতে পারে, কিন্তু অফিসে-বাসায় দু জায়গাতেই অফিসিয়াল কাজ করতে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না আপনার! আর ডেডলাইনের প্রেশারের সময়টা কিন্তু এভাবেই প্রতিদিন একটু একটু করেই তৈরী হয়। কাজের সময়গুলো অপচয় করার ফলেই কাজ আমাদের ব্যক্তিগত সময়টুকুও আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়।
৯)যতটুকু সম্ভব ততটুকুই দায়িত্ব নিনঃ
বসের কাছ থেকে কাজের দায়িত্ব নেবার সময় যতটুকু কাজ করতে পারবেন ততটুকুই নিন। শুধু শুধু বেশি কাজ নিয়ে যদি কাজগুলো সময়ের ভেতর শেষ না করতে পারেন তবে ক্যারিয়ারের জন্যে তা মোটেই ভালো নয়। আর আপনার বসও নিশ্চয়ই আপনি না চাইলে আপনার উপর অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দেবেন না।
এবার নিশ্চয়ই আপনাকে আর ডেডলাইন ছোঁয়ার দৌড়ে সামিল হতে হবে না! একটু কৌশলী হলেই কিন্তু আপনি এই ধরনের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন। এবার থেকে দেখবেন, আপনার সহকর্মীরা যখন ডেডলাইন ক্রস করার টেনশনে কাজের নিচে ডুবে যাচ্ছেন আপনি তখন হালকা ডানায় ভর করে হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছেন অফিসময়!Source: http://www.priyo.com/2013/09/15/31492.html