News:

Skill.jobs Forum is an open platform (a board of discussions) where all sorts of knowledge-based news, topics, articles on Career, Job Industry, employment and Entrepreneurship skills enhancement related issues for all groups of individual/people such as learners, students, jobseekers, employers, recruiters, self-employed professionals and for business-forum/professional-associations.  It intents of empowering people with SKILLS for creating opportunities, which ultimately pursue the motto of Skill.jobs 'Be Skilled, Get Hired'

Acceptable and Appropriate topics would be posted by the Moderator of Skill.jobs Forum.

Main Menu

নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে কিছু কথা

Started by Doha, March 23, 2019, 11:34:20 AM

Previous topic - Next topic

Doha

নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে কিছু কথা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আশা করা হচ্ছে, সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আর সেই সূত্রে বড় রাজনৈতিক দলগুলো শিগগিরই হয়তো তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে। সেসব দলীয় ইশতেহারে কী কী থাকবে, তা আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তবে ধারণা করা যায়, বিভিন্ন সময়ের বক্তৃতা-বিবৃতি ও বহুল উচ্চারিত কথোপকথনে তারা যা যা বলে, মোটামুটি সেগুলোই হবে নির্বাচনী ইশতেহারের মূল অনুষঙ্গ। এ অবস্থায় যেসব বিষয়ে তারা খুব কম বলে অথবা তা এড়িয়ে চলে কিংবা আদৌ বলে না বা বলতে চায় না, এরূপ কিছু বিষয় এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাব আকারে তুলে ধরা হলো।

গড় মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ইত্যাদি সূচক দেশে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও একই সঙ্গে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে সম্পদবৈষ্যমও এবং এ ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে তা ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ অবস্থায় সম্পদবৈষম্যের এ প্রবণতা রোধ করতে হলে যেসব রাষ্ট্রীয় নীতিমালার কারণে এসব বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রের নীতি-কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা জরুরি। সেটি করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কতটা প্রস্তুত সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তা ছাড়া আদর্শিক চিন্তাভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও উপলব্ধিগত দিক থেকেও এ ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে বলে মনে করি, যেসব সমস্যার সমাধানে তাদের নিজেদের পক্ষে উদ্যোগী না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সে ক্ষেত্রে জনমতের চাপ যদি বাড়ানো যায়, তাহলে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে হলেও এসব আদর্শিক চাহিদা পূরণে তারা এগিয়ে আসতে বাধ্য হবে। এই মুহূর্তে সে রকম একটি দাবি হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো যেন তাদের আসন্ন নির্বাচনী ইশতেহারে সমাজ থেকে সম্পদবৈষম্যে দূরীকরণে কী পন্থা অবলম্বন করবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরে।

দ্বিতীয়ত, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্বনির্ভর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গিয়ে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, জনগণ তা জানতে চায়। অতীতে এ দুটি ব্যাপারেই বড় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ওয়াদা রক্ষা করেনি এবং কিছু ক্ষেত্রে চাতুর্যের আশ্রয় নিয়েছে। অবশ্য ব্যাপকভাবে মনে করা হয় যে বিদ্যমান আমলাতন্ত্রই তাদের কায়েমি স্বার্থকে ধরে রাখার জন্য নেপথ্যে থেকে এ ব্যাপারে ঘুঁটি চালছে। বস্তুত তারাই প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্বনির্ভর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। তবে রাজনৈতিক দলগুলোও এ ব্যাপারে তাদের দায় এড়াতে পারে না। কারণ আমলাতন্ত্রকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহারের দায়িত্ব তো সর্বাগ্রে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের ওপরই বর্তায়। এ অবস্থায় প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও শক্তিশালী স্বনির্ভর স্থানীয় সরকার গড়ে তোলার ব্যাপারে তারা আমলাতন্ত্রের কৌশলী আচরণকে কিভাবে মোকাবেলা করবে এবং স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায় ভাগ বসানোর প্রচলিত ধারা থেকে সংসদ সদস্যরা কিভাবে বিরত থাকবেন সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে কোনো ধরনের ধূম্রজাল নয়—সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেখতে চাই।

নবপর্যায়ে রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের সামনে একটি অনেক বড় ইস্যু। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অনুকূলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীতিগত সমর্থন এখনো নিরঙ্কুশ নয়। তদুপরি যারা বাংলাদেশকে সমর্থন করছে, তারাও তা করছে অনেকটাই কূটনৈতিক কলাকৌশলের আবরণ মেখে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারকে বাধ্য করার জন্য যে ধরনের চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এখনো তা লক্ষ করা যায়নি। এ অবস্থায় কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারকরণের মাধ্যমে শিগগিরই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে তা বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ঝুঁকির চেয়েও বড় ঝুঁকি হচ্ছে সামাজিক ও রাজনৈতিক ঝুঁকি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের কেন্দ্র করে নিকট-ভবিষ্যতের বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় গেলে এ ব্যাপারে কে কী করবে, নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে তা জানা প্রয়োজন।

বঙ্গোপসাগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তেল-গ্যাস আহরণে নিয়োজিত বিদেশি কম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত উৎপাদন বণ্টন চুক্তিসহ (পিএসসি) খনিজ সম্পদ আহরণ নীতির বিষয়টিও রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে উঠে আসা প্রয়োজন। একইভাবে দেশের ভবিষ্যৎ জ্বালানি চাহিদা পূরণে কার কী ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে, সেটিও এসংক্রান্ত অঙ্গীকারের আওতায় উঠে আসতে পারে বলে মনে করি। জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোন খাতের জন্য কী ধরনের ভর্তুকি ব্যবস্থা চালু থাকবে এবং এ খাতে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অদক্ষতার যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো কিভাবে মোকাবেলা করা হবে—সে বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আসা প্রয়োজন।

প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সর্বস্তরেই শিক্ষার মানের দ্রুত অবনতি ঘটছে। যেসব কারণে এটি ঘটছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার ত্রুটি ও অনিয়মের কারণে যোগ্য শিক্ষকের অভাব, শিথিল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আওতায় ব্যাপকসংখ্যক মানহীন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্মলাভ, কোনো প্রকার মান যাচাই ছাড়াই কওমি ও অন্যান্য মাদরাসা সনদকে বিশ্ববিদ্যালয় সনদের সমমর্যাদাদান ইত্যাদি। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে অচিরেই দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজকে নেতৃত্বদানের মতো উপযুক্ত শিক্ষিত জনবলের ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় এ বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে নিজেদের বক্তব্য স্পষ্ট করবে—এটিই প্রত্যাশা।

একইভাবে উচ্চ সম্পদ সহায়ক বিদ্যমান রাজস্বব্যবস্থাকে স্বল্প সম্পদধারীদের অনুগামী করে তোলা, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম প্রতিরোধ ও পেশাদারি প্রতিষ্ঠা, জনগণের শহরমুখী অভিগমন প্রবণতার মাত্রাতিরিক্ততা রোধ, যানজট নিরসন, সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরশীল করে তোলা ইত্যাদি বিষয়েও সাধারণ জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে যথাযথ বক্তব্য দেখতে চায়। আশা করব, নির্বাচনী ইশতেহারে নিজেদের পরিকল্পনা ও অঙ্গীকারকে যথাযথভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে  প্রতিটি দলই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হবে। জনমতকে নিজেদের পক্ষে টানার জন্য এমন চমৎকার সুযোগ আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো হাতছাড়া করবে না বলেই আশা করি।

লেখক : পরিচালক
আবু তাহের খান
ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
atkhan56@gmail.com


Source: Kaler Kantho
Date: 23.11.2018