News:

Skill.jobs Forum is an open platform (a board of discussions) where all sorts of knowledge-based news, topics, articles on Career, Job Industry, employment and Entrepreneurship skills enhancement related issues for all groups of individual/people such as learners, students, jobseekers, employers, recruiters, self-employed professionals and for business-forum/professional-associations.  It intents of empowering people with SKILLS for creating opportunities, which ultimately pursue the motto of Skill.jobs 'Be Skilled, Get Hired'

Acceptable and Appropriate topics would be posted by the Moderator of Skill.jobs Forum.

Main Menu

চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি মার্কিন শুল্ক আরোপের নেপথ্যে-আবু তাহের খান

Started by Doha, July 01, 2018, 09:55:18 AM

Previous topic - Next topic

Doha

 
চীনা  পণ্যের ওপর বাড়তি মার্কিন শুল্ক আরোপের নেপথ্যে
-আবু তাহের খান


সম্পাদকীয়

চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি মার্কিন শুল্ক আরোপের নেপথ্যে
আবু তাহের খান
| ২০:৫২:০০ মিনিট, জুলাই ০১, ২০১৮
 
  0 Shares
মার্কিন পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টার দেয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে পণ্য রফতানির পরিমাণ ছিল ১৬৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এর বিপরীতে একই সময় চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৭৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০৯ বিলিয়ন ডলার। বিশ্ববাণিজ্যের সর্বশেষ প্রবণতা আভাস দিচ্ছে, নিকট ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের আমদানি আরো বাড়বে এবং সেই সুবাদে চীনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ক্রমে বাড়বে। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে ডব্লিউটিওতে যোগদানের আগ পর্যন্ত মার্কিন পণ্যের ওপর চীনের আমদানি শুল্কহার আরো বেশি ছিল। কিন্তু ডব্লিউটিওতে যোগদানের পর এ হার অনেক নিচে নেমে এসেছে, যা এখন সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ এবং মাঝারি শিল্পজাত পণ্য ও উচ্চপ্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট শিল্পপণ্যের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ২০ ও ১৫ শতাংশ। এর বিপরীতে বহু চীনা পণ্যের ওপরই মার্কিন আমদানি শুল্কের হার ২৫ শতাংশের উপরে। কিন্তু তার পরও চীনা পণ্যের আমদানি যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

এরূপ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনা পণ্যের ওপর প্রথমে ২৫ শতাংশ ও পরে আরো ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছেন, সাধারণ পরিস্থিতিতে তাতে মোটেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। কিন্তু এমন এক সময়ে এবং এমনসব ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন যে, তাতে এর পেছনে অন্যবিধ কারণ খোঁজার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। আর সে কারণ যথেষ্টই বস্তুনিষ্ঠ। তথ্য বিশ্লেষণ শেষে দেখা যাচ্ছে, একযুগ ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের আমদানির পরিমাণ বছরে প্রায় ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এ অবস্থায় চীনা পণ্যের আমদানি ঠেকানোই যদি ট্রাম্পের মূল উদ্দেশ্য হতো, তাহলে তাঁর মতো একজন উগ্রপন্থী মানুষের পক্ষে এটি ২০১৭-এর জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর পরই করার কথা ছিল। কিন্তু একজন পটু ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে তিনি জানতেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের নিজের স্বার্থেই চীনের সঙ্গে এরূপ কোনো বাণিজ্যবিরোধে যাওয়াটা সমীচীন হবে না। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় দেড় বছর পর হঠাৎ করে কেন তিনি চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেন। সংক্ষেপে এখন সে জবাবটিই খোঁজার চেষ্টা করা যাক।

উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প সিঙ্গাপুরে বৈঠকে বসেন ২১ জুন। তার অব্যবহিত পূর্বে ৩ জুন হঠাৎ করেই তিনি চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন এবং মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত শুল্কযোগ্য ১ হাজার ৩০০ চীনা পণ্যের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে মোটামুটি খোঁজখবর রাখেন, এরূপ ব্যক্তিমাত্রই জানেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কিমের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদ চলছিল। ট্রাম্প বলছিলেন, তিনি উত্তর কোরিয়াকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবেন। আর কিম ট্রাম্পকে আখ্যায়িত করেন মানসিক বিকারগ্রস্ত বুড়ো বলে। পরস্পরের প্রতি তাদের হুমকি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, অনেকে ভাবতে শুরু করেছিলেন, এই বুঝি একে অন্যকে আক্রমণ করে বসে!

তবে এরূপ একটি চরম পরিস্থিতির পরও যে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠকে বসা সম্ভব হয়েছিল, তার অন্যতম কারণ ছিল উত্তর কোরিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত ভূরাজনীতি। ওই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে উত্তর কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ সংকট এমনই চরমে পৌঁছেছে যে, এ থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে তাদের পক্ষে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে না বসে অন্য কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চীন মানবিক, বাণিজ্যিক ও কৌশলগত কারণে তার নিকটতম প্রতিবেশী ও অন্যতম বাণিজ্যিক অংশীদার দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। আর এরূপ পরিস্থিতিতে চীন যাতে সত্যি সত্যি সে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে না বসে এবং সেই সুযোগে উত্তর কোরিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসা থেকে পিছিয়ে না যায়, সেজন্যই চীনকে চাপে রাখতে ৩ এপ্রিল হোয়াইট হাউজ থেকে চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়া হয়।

এদিকে প্রেসিডেন্ট কিম ১৯ জুন দুদিনের সফরে চীন যান। সেখানে তিনি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যে বৈঠকের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে চীনকে রাজি করানো। কূটনৈতিক মহল থেকে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, চীন এ প্রস্তাবটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার কথা ভাবছে এবং শেষ পর্যন্ত চীন যদি সত্যি সত্যি এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বসে, তাহলে ট্রাম্প-কিম বৈঠকের ফলাফল আখেরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। আর এরূপ পরিস্থিতিতেই চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ-সংক্রান্ত হোয়াইট হাউজের ১৮ জুনের এ ঘোষণা।

এটি এখন খুবই স্পষ্ট, মার্কিন বাজারে চীনা পণ্যের প্রবেশ ঠেকানো নয়, বরং ট্রাম্প-কিমের মধ্যকার সাম্প্রতিক সিঙ্গাপুর চুক্তির শর্ত ভেঙে উত্তর কোরিয়া যাতে তার পারমাণবিক অস্ত্রের পরিপূর্ণ ধ্বংস করা থেকে পিছিয়ে যেতে না পারে এবং চীন যাতে উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়, সেজন্যই চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাড়তি শুল্ক আরোপের সর্বশেষ এ ঘোষণা। এসবের ফলাফল শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ উত্তর কোরিয়াসহ সব রাষ্ট্রেরই পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ যেমন চায়, তেমনি মানবিক কারণে উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহারের প্রত্যাশা করে। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যদি চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর করে বসে, তাহলে চীনও নিশ্চয় চুপ করে বসে থাকবে না। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তারাও হয়তো মার্কিন পণ্যের ওপর অনুরূপ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেবে, যেরূপ ঘোষণা এরই মধ্যে তারা দিয়ে রেখেছে। পরিস্থিতি সে পথ ধরে এগোলে এশিয়ার এ অঞ্চলে, বিশেষ করে কোরীয় উপদ্বীপ সন্নিহিত এলাকায় শান্তির সম্ভাবনা অনেকটাই তিরোহিত হয়ে পড়বে নাকি? আর তাতে ট্রাম্প-কিমের মধ্যকার সিঙ্গাপুর বৈঠকের ফলাফলও কি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে না?



লেখক : পরিচালক

ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি