পেশা নিয়ে মাথা ঘামানো
পড়ালেখার অন্যতম মূল একটি লক্ষ্য হচ্ছে ভালো একটি ক্যারিয়ার গড়ে তোলা। ভবিষ্যত পেশাকে মাথায় রেখেই তাই শিক্ষাজীবনেই সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে পড়তে হয়। পেশাগত জীবনের জন্য দক্ষতাও তৈরি করতে এবং বৃদ্ধি করতে হয়। সেটা পড়াশোনার মাধ্যমেই হোক আর বিভিন্ন কোর্স করার মাধ্যমেই হোক। তবে পৃথিবীতে সবাই কিন্তু একই রকম পেশা বেছে নেয় না। কেউ হয়ত চিকিত্সক হবে কিংবা কেউ চায় স্বাধীনভাবে চলতে, কেউ চায় শিক্ষকতা করতে। কিন্তু একটা বিতর্কের বিষয় থেকেই যায়, পেশা হিসেবে কোনটা ভালো?চাকরি না ব্যবসা। এই বিষয় নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগেনি, এমন তরুণের সংখ্যা খুব কমই পাওয়া যাবে। তাই খোঁজা যাক প্রশ্নের উত্তর, কোনটা বেশি ভালো?চাকরি নাকি ব্যবসা।
চাকরি মানেই হল মাস শেষে নির্দিষ্ট অঙ্কের একটা বেতন পাওয়া। সেটা ছোট অংকের অংকেরও হতে পারে কিংবা হতে পারে বিশাল অংকের। তবে অনেকেরই আবার বসকে তেল দেওয়া বা তোষামোদ করার মতো মানসিকতা নেই। তাদের কাছে চাকরি ভালো লাগবে না এটাই স্বাভাবিক। চাকরিতে আছে প্রতিদিন বসের ঝাড়ি খাওয়ার সম্ভাবনা। নিজের মুখ ফুটে যে নিজের মতামত প্রকাশ করবেন, সেটাও করা সম্ভব হয় না অনেকের ক্ষেত্রে। তবে মানিয়ে নেওয়াটাই হল আসল কথা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, চাকরিজীবী পরিবারের সন্তানরা করতে বেশি অভ্যস্ত। তাদের কাছে চাকরি মানে নিশ্চিন্ত জীবন, মাস শেষে নির্দিষ্ট অংকের টাকা। তাদের কাছে পড়াশোনার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে জ্ঞান অর্জন নয়, ডিগ্রি অর্জন আর একটা চাকরি।
চাকরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন তারা যারা একটু ঠোঁটকাটা স্বভাবের। দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সহকর্মীদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি বসের মুখের উপরও যখন তখন না বুঝে শুনে দুম করে একটা কিছু বলে বসেন। তাদের জন্যে চাকরি না করাই ভাল। তবে চাকরিতে একটা ভালো দিক হলো লাভ-লোকসান নিয়ে খুব একটা বেশি মাথা ঘামাতে হয় না। মন দিয়ে কাজ করে মাস শেষে টাকা বুঝে নিলেই হলো। লাভ-লোকসান নিয়ে চিন্তা করবেন বস।
বলা হয়ে থাকে, চাকরি করলে নাকি নিজের উপর আত্মবিশ্বাস খানিকটা কমে যায়। ব্যবসা যারা করে তারা রিস্ক নিতে ভয় পায় না। কিন্তু চাকরিজীবীদের মধ্যে রিস্ক নেওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত কম।
প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবসা করার জন্য বিভিন্ন অঞ্চলে পাড়ি জমিয়েছে বণিকরা। সে সময় শুধুমাত্র একটা শ্রেণীই ব্যবসা বাণিজ্য করত। বলা হত বাণিজ্যে লক্ষ্মী বসতি। সময় পাল্টেছে, সেইসাথে পাল্টেছে ব্যবসার পদ্ধতি আর ধ্যান-ধারণাও। কিন্তু এখনও অনেক মানুষেরই আগ্রহ রয়েছে ব্যবসায়। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তানেরা ব্যবসাতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। পরিবারে ব্যবসার চল না থাকলে নাকি পাকা ব্যবসায়ী হওয়া যায় না। এরকম ধ্যান ধারণা ভেঙ্গে অনেকেই এখন ব্যবসায় হাত পাকানো শুরু করেছে। তরুণ-তরুণীদের কাছে ব্যবসাটাও ইদানীং আগ্রহের বিষয়। কেননা চাকরিতে নাকি শটকার্টে বড়লোক হবার সুযোগ নেই, কিন্তু ব্যবসাতে সেটা আছে। তবে এ ক্ষেত্রে যে ব্যবসা করবে তাকে অবশ্যই ভালোভাবে ব্যবসাকে বুঝতে হবে। ব্যবসা ভালোভাবে না বুঝে করলে লাভের চেয়ে যে ক্ষতির পাল্লাটাই ভারী হবে। ব্যবসায় যেমন উপরে উঠা যায় তাড়াতাড়ি তেমনি নামাও যায় খুব তাড়াতাড়ি। যেসব তরুণ একটু স্বাধীনচেতা, পরিবারে ব্যবসার ইতিহাস রয়েছে, কিংবা যারা অন্যের অধীনে কাজ করতে পছন্দ করেন না, তারাই সাধারণত ব্যবসায় আসেন। ব্যবসাতে আছে রিস্ক। তাই দেখে-শুনে-বুঝে পা ফেলতে হয়। ঠাণ্ডা মাথায় কাজ না করে ঝোঁকের মাথায় কিছু করে বসলেই বিপদ।
ব্যবসার কিছু কৌশলও আছে, যেগুলো বুঝতে পারলেই লাভ হবে কিন্তু না বুঝলেই ঠেলা সামলাতে হবে ব্যবসায়ীকে। পরিণামে মাথায় হাত দিয়ে হায় হায় করা ছাড়া আর কোন উপায় সামনে থাকবে না। সেদিক থেকে চাকরি অনেক নিরাপদ। অতশত দিক চিন্তা না করলেও চলে। শুধু বসের নির্দেশ মেনে ঠিকঠাক কাজ করলেই হল। চাকরিজীবীর সুবিধা হলো দিন শেষে আছে ছুটির হাতছানি। অনেকটা ঠিক রুটিনের ছকের মধ্যে চলাফেরা করেন চাকরিজীবীরা। কিন্তু একজন ব্যবসায়ীর জীবনে কাজের সময় বলে কিছু নেই। শুক্রবারের মতো ছুটির দিনেও কাজ থেকে নিস্তার নেই। তবে অফ সিজনে তাদের সুযোগ রয়েছে ভ্রমণের। পরিবারকে সময় দেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীদের সুযোগ কম।
আসলে ব্যবসা বা চাকরির মধ্যে কোনটা ভালো, সেটা বলা মুশকিল। দুই ক্ষেত্রেই রয়েছে সাফল্যের সম্ভাবনা। সঠিকভাবে চিন্তার মাধ্যমে আসলে প্রত্যেককেই বুঝে নিতে হবে তার জন্য কোনটা হবে ক্যারিয়ার গড়ার সর্বোত্তম মাধ্যম?চাকরি না ব্যবসা।Source: http://goo.gl/r829D6