নতুন চাকরিতে শুরু থেকেই সক্রিয় হোন
(https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/640x361x1/uploads/media/2016/03/18/36b38ceb04549d77cb7eaee48c0e43e2-16.jpg)
নতুন চাকরি পাওয়ার পর আনন্দের শেষ থাকে না। তবে কর্মস্থলে যোগদানের আগ পর্যন্ত মনের মধ্যে উঁকি দেয় নানা কৌতূহল। শুরুতে ভালো করার উদ্দীপনাও থাকে। আবার কেউ কেউ অল্প দিনের মধ্যে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। 'শুরুর ধাক্কা' সামলাতে না পেরে হতাশায় ভোগেন। কাজের পরিধি, কর্মপরিবেশ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা সহকর্মীর ব্যবহার-সবকিছু তখন প্রতিকূল মনে হয়। তবে ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারলে নিজের কর্মদক্ষতা তুলে ধরা সম্ভব হয়। সবার সঙ্গে মিলে নিজেকে মেলে ধরতে হলে শুরু থেকেই সজাগ থাকতে হবে; হতে হবে সক্রিয়।
সতেজ থাকুন, সহজহোন
নতুন চাকরিতে যোগদানের প্রথম দিনটাকে সাদরে গ্রহণ করুন। শুরু থেকেই নতুন কর্মস্থলকে আপনার জন্য শেষ জায়গা ভাবুন। কারণ, আপনি জেনেশুনে এখানে আসার জন্য আবেদন করেছিলেন। আপনার ওপর আস্থা রেখে তাঁরা আপনাকে মনোনীত করেছেন। সুতরাং আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন। সব সময় সতেজ থাকুন। চেষ্টা করুন সবকিছু সহজভাবে নেওয়ার। এমনকি আপনার মতের বিপরীতে গেলেও। আপনার চোখে মুখে যেন কোনো বিষয়ে বিরক্তির রেখা না দেখা দেয়।
হাত বাড়িয়ে দিন
নিজে থেকেই হাত বাড়িয়ে দিন। পরিচিত হন নিজের সহকর্মী ও অফিসের অন্যদের সঙ্গে। আপনার বিভাগের পাশাপাশি মানবসম্পদ, প্রশাসন, প্রকৌশল ও আইটিসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের সঙ্গে কাছে যান। পরোক্ষভাবে পরিচিত জনদের ডাকনামটাও জেনে নিন। প্রয়োজন টুকে রাখুন। ক্রমেই এই তালিকায় যুক্ত করুন নিরাপত্তাকর্মী, মালি, পিয়ন এমনকি ক্লিনারকেও। আপনার উপস্থিতি জানান দেওয়ার জন্য নামটা ছড়িয়ে দিন শুরুর দিনই। কারণ শুরুর দিন একবারই আসে।
শুরুটা হোক গোছানো
নিজের আইডি কার্ড, ডেস্ক, টেলিফোন, কম্পিউটার বুঝে নিন। গুছিয়ে ফেলুন ডেস্কের খুঁটিনাটি সবকিছু। মেইল সিস্টেম, কম্পিউটার পাসওয়ার্ড, ইন্টারনেটসহ আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা নিন। সবকিছু পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টকে ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে ফোন করে ধন্যবাদ জানান। ফোন নম্বরের তালিকা জোগাড় করুন। প্রাপ্য জিনিসের তালিকার একটি কপি নিজের কাছে রাখুন এবং বসকে অবহিত করুন।
কান খাঁড়া রাখুন
অফিসের নানা আলোচনা নিয়ে অন্ধকারে থাকলে চলবে না। আবার সব সময় সবার কানাঘুষায় কান দিতে নেই। শুনলেও সব কথা মাথায় রাখা বা সব বিষয়ে মাথা ঘামানো বোকামি। কারণ, সব কর্মস্থলে এক শ্রেণির কর্মী থাকেন যাঁরা হয়তো দীর্ঘদিন এক জায়গায় পড়ে আছেন। কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি বা সুবিধা না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত। তাই সুযোগ পেলেই মুখে ক্ষোভের খই ফোটে। একনাগাড়ে প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা, অসুবিধা, বসের দোষসহ নানা নেতিবাচক কথায় আপনার কান ভারী করে ফেলতে পারেন। যত দূর সম্ভব এঁদের থেকে দূরে থাকুন। সতর্কতার সঙ্গে আলাপ চালান। সম্ভব হলে এড়িয়ে চলুন।
কর্মস্থলে সবার সঙ্গে মিলে নিজেকে মেলে ধরতে হলে শুরু থেকেই সজাগ থাকতে হবে; হতে হবে সক্রিয়। তাহলে অচিরেই নতুন কর্মস্থলের পরিবেশ আপনার কাছে হয়ে উঠবে অনুকূল, কর্মযোগ
বাড়তি সময় নিন
কেউ সময় দেয় না, নিতে হয়। যেহেতু আপনি নতুন, তাই আপনাকেই সুযোগ বুঝে সময় নিতে হবে। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নিজেকে তুলে ধরতে হবে। কাজের ফাঁকে হয়তো এ ধরনের সুযোগ পাবেন। অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার প্রতি সব সময়ই মনোযোগী থাকতে হবে। কারও চা-কফির আহ্বানে না করবেন না। প্রয়োজনে নিজেই এ রকম আয়োজন করে সবাইকে আহ্বান জানাতে পারেন। দুপুরের খাবারের সময় আলোচনা জমিয়ে নিন। দেখবেন বন্ধুত্ব গভীর হচ্ছে। অফিসের স্টাফ গাড়ির ব্যবস্থা থাকলে সেখানেই জমে উঠতে পারে আলাপ, সহজেই গড়ে উঠতে পারে বাড়তি সম্পর্ক।
অনুষ্ঠানে প্রাণবন্ত থাকুন
অফিসের যেকোনো অনুষ্ঠানে প্রাণবন্ত থাকুন। সুযোগ পেলে নিজের মতামত দিন। আলোচ্য বিষয়ে আরও জানতে আগ্রহ দেখান। প্রয়োজনে প্রশ্ন করুন, অন্যের সহযোগিতা চান। সহকর্মীদের মধ্যেও এই বার্তা পাঠিয়ে দিন যে আপনি সব বিষয় নিয়ে জানতে ও শিখতে আগ্রহী। দেখবেন প্রতিযোগী নয়, সহযোগীসুলভ আচরণ পাবেন।
বসকে সব জানান
সবকিছুই বসকে জানান। আপনার প্রাপ্তি, অনুভূতি, পরিচিতি পর্ব, কাজের ধরন, পরিধি-প্রতিটি বিষয় যেন উঠে আসে আলোচনায়। এমনকি কোনো ব্যাপারে নিজের ভিন্ন মত থাকলে তা নিয়ে আসুন আলোচনার টেবিলে। তবে তা যেন না হয় অভিযোগের সুরে। তাহলে অচিরেই নতুন কর্মস্থলের পরিবেশ আপনার কাছে হয়ে উঠবে অনুকূল, কর্মযোগী।
লেখক: সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকSource: The Daily Prothom Alo