নতুন কর্মস্থলে 'শুরুর ধাক্কা' কীভাবে সামলাবেন
(https://spiderimg.amarujala.com/assets/images/2018/01/25/750x506/office_1516869839.jpeg)
নতুন কর্মস্থলে উত্সাহ উদ্দীপনা আর কৌতূহল নিয়ে যোগদানের পরই নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় অনেককেই। এই 'শুরুর ধাক্কা' সামলে উঠতে না পেরে অল্পদিনেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন কেউ কেউ। এমন হলে হতাশা চেপে বসতে পারে, নতুন কর্ম পরিবেশকে মনে হতে পারে প্রতিকূল। কাজের পরিধি, পরিবেশ, বস বা সহকর্মীর ব্যবহার, যে কারণেই হোক নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে এমন হতে পারে। কারণ যা-ই হোক, শুরুর এ ধাক্কা সামলে নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারলে নিজেকে মেলে ধরা সময়ের ব্যাপার মাত্র। নতুন কর্মস্থলে যোগদানের শুরুর দিন থেকেই সবার সঙ্গে মিলে নিজেকে এই মেলে ধরার কাজটি করতে হবে। ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিন মাস থেকে ছয় মাস নতুন কর্মস্থলে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এ সময় কিছু বিষয়ে খুবই আন্তরিক থাকতে হবে।
সহজ হন সতেজ থাকুন
নতুন চাকরিতে যোগদানের প্রথমদিনটাকে সাদরে গ্রহণ করুন। শুরু থেকেই নতুন কর্মস্থলকে আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ জায়গা ভাবুন। কারণ, আপনি জেনেশুনে এই জায়গাটার জন্য আবেদন করেছিলেন। আপনার ওপর আস্থা রেখে তাঁরা আপনাকে মনোনীত করেছেন। সুতরাং আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন। সব সময় সতেজ থাকুন। চেষ্টা করুন সবকিছু সহজভাবে নেওয়ার। এমনকি আপনার মতের বিপরীতে গেলেও। আপনার চোখেমুখে যেন কোনো বিষয়ে বিরক্তির রেখা না দেখা দেয়।
হাত বাড়িয়ে দিন
নিজে থেকেই হাত বাড়িয়ে দিন। পরিচিত হন নিজের সহকর্মী এবং অফিসের অন্যদের সঙ্গে। নিজের বিভাগের পাশাপাশি মানবসম্পদ, প্রশাসন, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হন। এজন্য সবচেয়ে পরিচিত কোনো একজনের কাছ থেকে সাহায্য নিন। পরোক্ষভাবে জেনে নিন আপনার বিভাগ এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিভাগের কর্মীদের ডাকনামটাও। প্রয়োজনে কোথাও তা টুকে রাখুন। ক্রমেই এই তালিকায় যুক্ত করুন নিরাপত্তাকর্মী, লিফটম্যান, পিয়ন এমনকি ক্লিনারের নামটিও।
শুরুটা হোক গোছালো
আইডি কার্ড, ডেস্ক, টেলিফোন, কম্পিউটার বুঝে নিন। মেইল সিস্টেম, কম্পিউটার পাসওয়ার্ড, অফিসে ইন্টারনেট ব্যবহারের আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিন কোনো সহকর্মীর সহায়তায়। আরও যা যা পান, গুছিয়ে রাখুন নিজের মতো করে। সবকিছু গ্রহণ করার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে ফোন করে ধন্যবাদ জানান। ফোন নম্বরের তালিকাটাও সংগ্রহ করে রাখুন। প্রাপ্য জিনিসের তালিকার একটি কপি নিজের কাছে রাখুন এবং বসকে অবহিত করুন।
খাড়া রাখুন কান
নানা আলোচনা নিয়ে অন্ধকারে থাকলে চলবে না। আবার সবার কথা শুনলেও সব কথা মাথায় রাখা বা সব বিষয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। কারণ, কর্মস্থলে একশ্রেণীর কর্মকর্তা থাকতে পারেন যারা হয়তো দীর্ঘদিন ওখানেই থিতু হয়ে আছেন। তাঁরা কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত থাকতেন পারেন। তাই সুযোগ পেলেই হয়তো আপনার সামনে ক্ষোভের কথা বলা শুরু করবেন। এক নাগারে প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা, অসুবিধা তুলে ধরবেন। নানাভাবে আপনাকে নিরুত্সাহিত করবেন। দৃষ্টিকটুভাবে না এড়িয়ে নিজেকে তাঁদের থেকে সচেতনভাবে দূরে রাখুন। সতর্কতার সঙ্গে আলাপ চালান।
বাড়তি সময় নিন
যেহেতু আপনি নতুন, তাই আপনাকেই সুযোগ বুঝে সময় নিতে হবে। কাজের ফাঁকেই হয়তো এ ধরনের সুযোগ পাবেন। অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার প্রতি মনোযোগী হন। তাঁদের চা-কফির আহ্বান মিস করবেন না। সুযোগ পেলে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে সহকর্মীদের চায়ের দাওয়াত দিন। দুপুরের খাবারের সময় আড্ডা-আলোচনায় যোগ দিন। দেখবেন সম্পর্ক গভীর হচ্ছে। সম্পর্ক আর সহযোগিতা বেড়ে যাচ্ছে। অফিসের স্টাফ গাড়ির ব্যবস্থা থাকলে সেখানেই জমে উঠতে পারে বাড়তি সম্পর্ক।
সমাবেশে প্রাণবন্ত থাকুন
যেকোনো মিটিঙে প্রাণবন্ত ও সক্রিয় থাকুন। সুযোগ পেলে নিজের মতামত দিন। আলোচ্য বিষয়ে আরও জানার আগ্রহ থাকলে তা বলুন। প্রয়োজনে অন্যের সহযোগিতা চান। সহকর্মীদের মধ্যেও এই বার্তা পাঠিয়ে দিন যে আপনি সব বিষয় নিয়ে জানতে, শিখতে আগ্রহী। দেখবেন প্রতিযোগী নয়, সহযোগীসুলভ আচরণ পাবেন।
বসকে জানান
কর্মস্থলের সবকিছইু বসকে জানাবেন। আপনার প্রাপ্তি, অনুভূতি, পরিচিতি পর্ব, কাজের ধরন, পরিধি প্রতিটি বিষয় যেন উঠে আসে আলোচনায়। এমনকি কোনো ব্যাপারে নিজের মতবিরোধ থাকলে তা-ও নিয়ে আসুন আলোচনার টেবিলে। তবে তা যেন অভিযোগের সুরে না হয়। তাহলে অচিরেই নতুন কর্মস্থলের পরিবেশ আপনার কাছে হয়ে উঠবে অনুকূল, কর্মোপযোগী।
Source: The Daily Prothom Alo