ছোট পুঁজিতে বড় ব্যবসা
ব্যবসা করতে হলে বড় পুঁজি দরকার—এই ধারণা ঠিক ছিল না কখনোই। ছোট আকারে শুরু হওয়া ব্যবসাও বড় হতে পারে স্রেফ দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের জোরে। গ্রাহকের চাহিদা ও জোগান বুঝে দুটির সমন্বয়ে যাঁরা এগোতে পারেন, তাঁরাই সফল হন। ছোট পুঁজিতে গড়ে তোলা বড় ব্যবসার অনেক উদাহরণ আছে দেশে-বিদেশে।
(https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/640x360x1/uploads/media/2018/12/09/3cfba06da306b4a10511b7e8fef9ff82-5c0cad151b98d.jpg)
আকিজ গ্রুপপারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য শৈশবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করতে পারেননি শেখ আকিজ উদ্দিন। ১৩ বছর বয়সে পকেটে মাত্র ১৬ টাকা নিয়ে নিজ গ্রাম ছেড়ে কলকাতা চলে যাওয়ার পর শিয়ালদহ স্টেশনে কয়েক সপ্তাহ খোলা আকাশের নিচে দিন কেটেছিল তাঁর। একসময় হাওড়া ব্রিজের কাছে কমলা প্যাডলিং থেকে সঞ্চয় করা স্বল্প অর্থ দিয়ে একটি মুদি দোকানের ভ্যান কিনে ব্যবসা শুরু করেন। ওই ভ্যানে তিনি বিভিন্ন পণ্য মাত্র ৬ পয়সায় বিক্রি করতেন। অবৈধভাবে দোকান খোলার অপরাধে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে ৩ দিন আটকে রাখে। পরবর্তী সময়ে ১৯৫২ সালে বিজরডাঙ্গা রেলস্টেশনে দোকান খুলে তিনি তামাক বিক্রি শুরু করেন, যা পরে দেশের বৃহত্তম একটি কোম্পানিতে পরিণত হয়।
(https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/640x360x1/uploads/media/2018/12/09/71246b6fde8ee6ef40f0886b0ef7e8ed-5c0cad159c4d6.jpg)
কুসুমকলি জুতার কারখানাশূন্য থেকে সবকিছু শুরু করে আজ যে মানুষটি সফল হয়েছেন, তিনি বাংলাদেশের নাজমা আক্তার। স্বল্প বেতনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পাশাপাশি সমিতি থেকে মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে এক রুম ভাড়া করে জুতার কারখানা দিয়েছিলেন। ২ জন কর্মী নিয়ে শুরু করা সেই কারখানার শাখা এখন দেশের বাইরেও আছে! ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ পুঁজি করে যে প্রতিষ্ঠান তিনি দাঁড় করিয়েছেন, সেটি এখন আড়াই কোটি টাকার প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হয়েছে। পুরো কারখানা পুড়ে যাওয়ার পরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো আবার নতুন করে শুরু করতে পেরেছেন। ইচ্ছা আর আত্মবিশ্বাস থাকলে যে শূন্য থেকে শীর্ষে পৌঁছানো যায়, এই সমাজে তার বড় প্রমাণ নাজমা আক্তার।
(https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/640x358x1/uploads/media/2018/12/09/ec2ba12bbc3fbbfc04e8329c61420444-5c0cad150ff20.jpg)
অ্যাপল১৯৭০-এর দশকের কথা। ব্যক্তিগত কম্পিউটার তৈরি ও বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলেন স্টিভ জবস ও স্টিভ ওজনিয়াক। কিন্তু এই কাজের জন্য যে পরিমাণ টাকা দরকার ছিল, তার কিছুই এই দুজনের ছিল না। সম্পদ বলতে যা ছিল তা হলো ওজনিয়াকের এইচপি ক্যালকুলেটর ও জবসের ভক্সওয়াগন ভ্যান। এই সম্পদ বিক্রি করে যে ডলার পাওয়া গেল, তা দিয়ে শুরু হয় অ্যাপলের যাত্রা। অ্যাপল আই তৈরির জন্য তাঁরা কম্পিউটার বানিয়েছিলেন একটি ভাড়া করা গ্যারেজে। কে জানত, গ্যারেজ থেকে শুরু হওয়া একটি প্রতিষ্ঠান একদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি হয়ে উঠবে! অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে আরও একজন ছিলেন। তিনি রোনাল্ড ওয়েইন। মাত্র ৮০০ ডলারে তিনি তাঁর শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিলেন!
(https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/640x310x1/uploads/media/2018/12/09/386087bb64cb5a738991a140f1e1cca4-5c0cad14d6408.jpg)
ওয়ালমার্টওয়ালমার্টের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটন যখন তাঁর প্রথম দোকানটি চালু করেন, তখন সালটা ১৯৪৫। সদিচ্ছা ছাড়া পুঁজি বলতে তাঁর আর তেমন কিছুই ছিল না। প্রাথমিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পণ্য ক্রয়ের জন্য তিনি তাঁর শ্বশুরের থেকে ২৫ হাজার ডলার ঋণ নেন। এই ঋণ দিয়ে ব্যবসা শুরুর প্রথম দিকেই তাঁর দোকান সাফল্যের মুখ দেখে। ১৯৬২ সালে চালু হওয়ার পর ১৯৭৬ সালের মধ্যেই এই প্রতিষ্ঠানটির মূল্য দাঁড়ায় ১৭৬ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ২৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের জোগান দেওয়া স্যাম ওয়ালটন একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ধনী হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি মারা গেছেন ১৯৯২ সালে। এখন বিশ্বের ২৭টি দেশে ওয়ালমার্টের ১১,২৭৭ টি দোকান আছে।
জুবেলী খানম।
Source: The Daily Prothom Alo