লোডশেডিংয়ের স্মার্ট সমাধান
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের সরবরাহ ও চাহিদা দ্রুত ওঠানামা করলে পুরো ব্যবস্থা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। ফ্রিকোয়েন্সি কমে গিয়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় আসতে পারে। এমন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান হলো গ্রিডের প্রয়োজন বুঝে বিদ্যুতের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা। বর্তমানে লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে কাজ চালাতে হয়। তবে শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী ও তাঁর দল ভেবে দেখলেন বাড়িতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, রেফ্রিজারেটর, হিটিং ব্যবস্থার মতো বিদ্যুৎ খরুচে যন্ত্রগুলো স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ রাখলে খুব একটা সমস্যা হয় না। এতে পুরো বাড়ির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে হয় না, আবার তাৎক্ষণিক লোড ব্যবস্থাপনাও সম্ভব। তাঁদের ধারণাটি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ ২০১৮ উপলক্ষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত আন্তবিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছে।
শাহরিয়ার আহমেদ ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়টির জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকও তিনি। রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে সাতারকুলে ক্যাম্পাস সরিয়ে নেওয়া হলেও তাঁর গবেষণাগার আপাতত পুরোনো ক্যাম্পাসেই রাখা হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর বিকেলে সেখানেই কথা হলো শাহরিয়ারের সঙ্গে। জানালেন, তাঁদের প্রকল্পের নাম ছিল 'ডিমান্ড রেসপন্স এনাবলড স্মার্ট গ্রিড'। চাহিদা বুঝে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা করতে পারে এটি। সঙ্গে বিদ্যুৎ চুরি রোধে সতর্ক করেও দিতে পারে।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র থেকে দেশে প্রথমবারের মতো সরাসরি জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া দেশের অনেক জায়গায় চালু হয়েছে মিনি গ্রিড সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র। সৌরবিদ্যুতের এসব কেন্দ্রের কারিগরি নকশা করেছেন শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী। আলোচনায় সে প্রসঙ্গও এল। একই সঙ্গে বললেন, 'সৌরবিদ্যুতে সব সময় একই হারে বিদ্যুৎ না-ও পাওয়া যেতে পারে। হয়তো বড় কোনো সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এমন সময় মেঘের আড়ালে চলে গেল সূর্য। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাবে, তবে চাহিদা তো কমেনি। এর প্রভাব পড়বে গ্রিডে। আমাদের স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থা মূলত অগ্রাধিকারমূলক। যে কাজে বিদ্যুৎ বেশি জরুরি তা ঠিক রেখে বাকিগুলোতে সরবরাহ কমিয়ে দেবে।'
স্মার্ট গ্রিডের আওতায় থাকা প্রত্যেক গ্রাহকের বিদ্যুৎ খরচের হিসাব স্মার্টফোন বা কম্পিউটার থেকে ড্যাশবোর্ডে পাওয়া যাবে। আবার চাইলে কোনো গ্রাহককে অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে। শাহরিয়ার আহমেদ বললেন, এখন পুরো এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে লোড কমানো হয়। আর স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থায় চাইলে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ স্টেশনের মতো গ্রাহকদের অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে। এতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হবে না। কাজটি করা যাবে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসেই।
কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড থেকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গ্রাহকেরা মুঠোফোন অ্যাপ থেকে ঘরের যেকোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে পারবেন। কেউ হয়তো বাতি বন্ধ না করেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেছেন। মুঠোফোন অ্যাপেই তা দেখা যাবে এবং চাইলে অ্যাপ থেকেই তা বন্ধ করে দেওয়া যাবে।
দেশে অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের নকশা করেছেন শাহরিয়ার আহমেদ। গবেষণাগারে ঢুকতেই তার সচিত্র বর্ণনা চোখে পড়ে। আর তাকও ভর্তি পুরস্কারে। সেখানে ২০১৬ সালের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কারও চোখে পড়ল। সেবার বানিয়েছিলেন স্বয়ংক্রিয় সেচব্যবস্থা। প্রচলিত সেচব্যবস্থায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পানি ও জ্বালানি অপচয় হয়। আর তাঁদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে মাটির আর্দ্রতা বুঝে যতটুকু দরকার, ঠিক ততটুকুই পানি দেবে। সে উদ্যোগের ফল পাওয়ার সময় এসেছে বলে জানালেন শাহরিয়ার। পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু হবে শিগগিরই। স্মার্ট গ্রিড নিয়েও আশাবাদী শাহরিয়ার।
https://www.prothomalo.com/technology/article/1557710/%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%A1%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9F-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8