Skill Jobs Forum

News Portal Career Article => Business Industry news => Topic started by: Doha on March 23, 2019, 12:07:53 PM

Title: ‘বাইশ পরিবারে’র পুনরুত্থান?
Post by: Doha on March 23, 2019, 12:07:53 PM
বিশ শতকের ষাটের দশকে তত্কালীন পাকিস্তানের সমগ্র সম্পদের সিংহভাগই কুক্ষিগত ছিল মাত্র ৪৩ পরিবারের হাতে, যাদের মধ্যে একজন মাত্র ছিলেন বাঙালি— এ.কে. খান (Rehman Sobhan: From Two Economies to Two Nations)। অবশ্য জনপ্রিয় আলোচনায় এটি ২২ পরিবার হিসেবেই সর্বাধিক পরিচিত। পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধুসহ বহু নেতাই তাঁদের ভাষণে ওই ২২ পরিবারের সম্পদ কুক্ষিগতকরণের বিষয়টিকে অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে তুলে ধরেন। বস্তুত এ সম্পদ শোষণ ও তা থেকে সৃষ্ট বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ধারাবাহিকতায়ই আজকের এ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম মৌল চেতনাই হচ্ছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম— একটি বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র গড়ে তোলা।

তো একটি বৈষম্যমুক্ত শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা থেকে সৃষ্ট বাংলাদেশ যখন ২০২১ সালে এর ৫০ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথএক্সের সর্বসাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য জানাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে বিশ্বে ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির হারের বিবেচনায় সর্বশীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১২-১৭ সময়ে বাংলাদেশে ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে এ সময়ে দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ এ সময়ে এ দেশে ধনীদের সম্পদ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গড় হারের চেয়ে প্রায় তিন গুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর রাষ্ট্রের বিদ্যমান অর্থনৈতিক নীতিকাঠামো অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোয় এ বৈষম্য যে আরো বাড়তেই থাকবে, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির ক্ষণে দারিদ্র্য বিমোচন ও আয় বৃদ্ধির নানা অগ্রগতির কথা যখন রাষ্ট্র তুলে ধরতে চাইবে, তখন এসব অর্জনের মহিমা এ ক্রমবর্ধমান সম্পদবৈষম্যের কারণে অনেকটাই ম্লান হয়ে যাবে না কি?

এখন প্রশ্ন, এ বৈষম্য কেন বাড়ছে এবং তা কমিয়ে আনা সম্ভব কিনা? একেবারে বিতর্কহীনভাবে প্রশ্নের প্রথম অংশের জবাব হচ্ছে, রাষ্ট্রের নীতিকাঠামোর মধ্যেই নিহিত রয়েছে এ বৈষম্যের বীজ এবং যে নীতিকাঠামো প্রণয়নে জনসংশ্লিষ্ট রাজনীতিকদের চেয়ে শ্রেণিস্বার্থপ্রবণ আমলাতন্ত্রের ভূমিকাই অধিকাংশ সময়ে মুখ্য হিসেবে কাজ করেছে। ফলে শোষণ ও বৈষম্য বিলোপের জনআকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা অর্জন করলেও আমলাতান্ত্রিক এ রাষ্ট্রে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অধিকাংশ সিদ্ধান্তই শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের স্বার্থের পক্ষে না গিয়ে বিত্তবান মানুষের স্বার্থকে পাহারা দিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বিভিন্ন খাতের এরূপ কিছু নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গ নিয়ে এখানে খানিকটা আলোকপাত করা যেতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রা আহরণকে অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে গণ্য করে রফতানি বৃদ্ধিকে উৎসাহদানের জন্য তৈরি পোশাক, হিমায়িত চিংড়ি, চামড়াজাত পণ্য, হস্তশিল্প, কৃষিজাত দ্রব্যাদি ইত্যাদিসহ বেশকিছু পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে প্রতি বছরের বাজেটে নগদ ভর্তুকির ব্যবস্থা রাখা হয়। আর সহজেই বোধগম্য, বিত্তবান রফতানিকারককে প্রদত্ত এ ভর্তুকি তার সম্পদ বৃদ্ধিকেই শুধু সহায়তা করছে না; এ ভর্তুকি পরিশোধের জন্য সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝাও বাড়ানো হচ্ছে, প্রকারান্তরে যা সমাজের এ দুই শ্রেণীর মধ্যে সম্পদবৈষম্য বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে।

রফতানি আয়ের ওপর নগদ ভর্তুকি প্রদানের ব্যাপারে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের অন্যতম যুক্তি, এটি বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের জন্য একটি খুবই সহায়ক কৌশল, যা বাণিজ্য ঘাটতি মেটানোর জন্য অত্যন্ত জরুরি। তো বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকে উৎসাহিত করার জন্য নগদ ভর্তুকি যদি দিতেই হয়, তাহলে বাংলাদেশের যে শ্রমজীবী মানুষ নিজেদের ভিটামাটি বিক্রি করে বিদেশে গিয়ে সেখানে অমানবিক পরিশ্রম করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা স্বদেশে পাঠায়, তাদের সে আয়ের ওপর নগদ ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে না কেন? যুক্তি বলে, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকে উৎসাহদানের লক্ষ্যে নগদ ভর্তুকি যদি প্রদান করতেই হয়, তাহলে সর্বাগ্রে তা করতে হবে প্রবাসী আয়ের ওপর; পণ্য রফতানির ওপর নয়। আর অভিমত হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান পর্যায়ে এ ধরনের নগদ ভর্তুকির এখন আর কোথাও কোনো প্রয়োজন নেই এবং তা অব্যাহত রাখা মানেই হচ্ছে তেলে মাথায় আরো বেশি করে তেল মাখা, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সম্পদবৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে তোলা।

সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর বিভাগের একটি অন্যতম জনপ্রিয় কৌশল হচ্ছে প্রত্যক্ষ করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি করা (পরোক্ষ কর ধনী-দরিদ্র সবাই দিচ্ছেন)। অন্যান্য উন্নত দেশের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে প্রায়ই দেখানোর চেষ্টা করা হয়, মোট জনসংখ্যার তুলনায় বাংলাদেশে করদাতার সংখ্যা এখনো অনেক কম। এ ধরনের তুলনার মধ্যে বড় ধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে। জিডিপির সঙ্গে করের অনুপাত মেলানোর চেষ্টাটি ঠিক আছে। কিন্তু করদাতার সংখ্যার ঢালাও সম্প্রসারণ কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধির সর্বোত্তম উপায় নয় কোনোভাবেই। কারণ দেশের সম্পদ তো সব মানুষের মধ্যে সমান হারে ছড়িয়ে নেই যে, সবাইকে একই মাপকাঠিতে করের আওতায় নিয়ে আসা যায়। এক্ষেত্রে শুধু করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি করে নয়, সম্পদের পরিমাণের ভিত্তিতে করের পরিমাণ বাড়িয়ে এবং বিদ্যমান করদাতাদের মধ্যে কর ফাঁকি কমিয়ে অতি সহজেই উল্লিখিত অনুপাতকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলা যেতে পারে। হিসাব করে দেখা গেছে, প্রত্যক্ষ করদাতার সংখ্যা আর একজন না বাড়িয়েও কেবল কর ফাঁকি প্রতিরোধ করে যৌক্তিক হারে কর আদায় করা গেলে বিদ্যমান করদাতাদের কাছ থেকেই প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ কর আদায় করা সম্ভব। কিন্তু সেটি না করে অর্থাৎ বিত্তবানের কর ফাঁকির বোঝা প্রত্যক্ষ করদাতার সংখ্যা বাড়িয়ে মধ্যবিত্তের ওপর এবং পরোক্ষ কর বাড়িয়ে নিম্নবিত্ত বা বিত্তহীনের ওপর চাপানোর যে চেষ্টা চলমান রয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়বে বটে। তবে তার চেয়েও বেশি করে বাড়বে সম্পদবৈষম্য।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় খাত এখন সেবা খাত। বেসরকারি পর্যায়ে মোবাইল ফোন, ব্যাংকিং, ইন্স্যুরেন্স, চিকিৎসা, পরিবহন, ইজারা, জনশক্তি রফতানি, আইসিটি, কুরিয়ার ইত্যাদি সেবা খাতের প্রসার এখন এতটাই দ্রুততার সঙ্গে ঘটছে যে, বস্তুত এসব খাতের দ্রুততর বিকাশের কারণেই সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এরূপ উচ্চতর হার বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু নেপথ্যের অনালোচিত তথ্য পর্যালোচনা করলে আরো একটি চিত্র পাওয়া যাবে এবং তা হচ্ছে, সচেতনতার অভাবে অথবা অসংগঠিত থাকার কারণে এসব খাতের ভোক্তারা সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের যথেচ্ছ মুনাফার দাবি প্রশ্নহীনভাবে মিটিয়ে যাচ্ছেন। আর এ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের মুনাফার পাহাড়ই শুধু স্ফীত হচ্ছে না, সাধারণ মানুষ তাদের দৈনন্দিন আয়ের একটি বিরাট অংশ বাধ্য হয়ে তাদের হাতে সঁপে দিয়ে দেশে সম্পদবৈষম্যের মেরুকরণের প্রবণতাকেও ত্বরান্বিত করে তুলছেন।

সন্দেহ নেই, স্বাধীনতা-উত্তর গত ৪৭ বছরে দেশের প্রতিটি মানুষের আয়-উপার্জন ও জীবনযাপনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে ভূমির মালিকানার ক্ষেত্রে যে মেরুকরণ ঘটেছে, তা রীতিমতো আতঙ্কজনক ভবিষ্যতেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১৯৭২ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে দেশের সমগ্র ভূমির একটি বড় অংশই চলে গেছে বিত্তবান উঠতি পুঁজিপতিদের হাতে। উদ্বেগের বিষয়, নিকট ভবিষ্যতের বাংলাদেশে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ যখন আরো বাড়বে, তখন একই সঙ্গে বাড়বে ভূমিহীন সচ্ছল স্বল্পভূমির মালিকানাধারী নগদ বিত্তের মানুষের সংখ্যাও, যারা যেকোনো মূল্যে ভূমির মালিকানা করায়ত্ত করতে গিয়ে নিম্নবিত্ত সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকে আরো কষ্টকর করে তুলবে। আর এ পরিস্থিতিতে সম্পদবৈষম্যের মেরুকরণ এমন এক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে, যা নতুন করে অনাকাঙ্ক্ষিত সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে উঠতে পারে। ফলে দেশে ভূমির অধিগ্রহণ ও মালিকানা ব্যবস্থার আশু পর্যালোচনা প্রয়োজন বলে মনে করি। শিল্পোন্নয়নকে উদ্দেশ করে নতুনভাবে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে যে প্রক্রিয়ায় ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলছে, সীমিত ভূমির এ দেশে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়ন কৌশল হিসেবে সেটি যথার্থ কিনা, তা জরুরি ভিত্তিতে ভেবে দেখা প্রয়োজন। সম্পদবৈষম্য রোধে তো প্রয়োজন অবশ্যই।

২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ছিল ৯২৩ মার্কিন ডলার, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলারে। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে উঠলেও এ সময়ের ব্যবধানে শিল্প শ্রমিকের বেতন বেড়েছে খুবই সামান্য। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির হারও মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধির হারের মতোই উৎসাহব্যঞ্জক ২০০৯-১০ অর্থবছরের পর থেকে শুধু ২০১৩-১৪ অর্থবছর ছাড়া কখনই তা ১০ শতাংশের নিচে নামেনি। অথচ শিল্প খাতে শ্রমিক মজুরির হার এখনো বহু ক্ষেত্রে রীতিমতো অমানবিক, যে ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ শুধু বাঞ্ছনীয়ই নয় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতারও অন্তর্ভুক্ত। এসব খাতের উদ্যোক্তাদের উৎসাহদানের লক্ষ্যে সরকার অহর্নিশ তাদের  নানা আর্থিক ও অন্যান্য প্রণোদনা জুগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসব প্রণোদনা প্রদানের শর্তে কেন থাকছে না যে, তা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের যুক্তিসঙ্গত হারে মজুরি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে? রাষ্ট্রের নীতিকাঠামোয় বিত্তবানদের প্রতি এরূপ পক্ষপাত আর বিত্তহীনের প্রতি বিরূপতা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনের বাংলাদেশে সম্পদবৈষম্য আরো প্রকট আকার ধারণ করলে তাতে মোটেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

রাষ্ট্রীয় নীতিমালার অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি মোটামুটি একই রকম, যা কখনো প্রত্যক্ষভাবে আবার কখনোবা পরোক্ষে সম্পদবৈষম্যকেই ক্রমাগত উৎসাহিত করে চলেছে। এ পরিস্থিতিতে মনে রাখা প্রয়োজন, ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে এ দেশের আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন প্রতিবাদী-সংগ্রামী মানুষ শুধু একটি ভূখণ্ডের জন্য আন্দোলন করেনি। তাদের সে আন্দোলনের অন্তর্মূলে প্রোথিত ছিল বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চেতনা। বস্তুত সেটাই হচ্ছে এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনা। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার প্রসঙ্গ যদি আসে, তাহলে মানতেই হবে যে, বিদ্যমান আমলা নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রীয় নীতিমালায় পুঁজি ও বিত্তের পক্ষে যে অকুণ্ঠ সমর্থন এবং বিপরীতে সাধারণ মানুষের স্বার্থের প্রতি যে উপেক্ষা সেটি দূরীভূত করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপুষ্ট শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এ দেশে কখনই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। বিপরীতে বরং এসব নীতিমালার সমর্থন নিয়ে বিত্তবানরা আরো বিত্তবান হয়ে উঠবে, যেমনটি হয়ে উঠেছিল তত্কালীন পাকিস্তানের ২২ পরিবার। আর পুঁজির ধর্ম অনুযায়ী, সে বিত্তের শোষণে সাধারণ মানুষ হয়ে পড়বে আরো অধিক অসহায়। কিন্তু ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকের বাঙালি সে শোষণ ও অসহায়ত্বকে মেনে নেয়নি; বরং উল্টো প্রতিবাদ করেছে, যার ফল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু দেশ স্বাধীন হয়ে গেল বলে কি সে প্রতিবাদ আজ অপ্রাসঙ্গিক? মোটেও না। তবে হ্যাঁ, সে প্রতিবাদের ধরন ও কৌশল হতে হবে ভিন্নতর। পাকিস্তান আমলে সামরিক শাসকরা নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় সমর্থনেই শোষণের ওই কাঠামোকে নিয়মসিদ্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকার কেন বৈষম্যসহায়ক রাষ্ট্রীয় নীতির পক্ষ নেবে? ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সরকারকেই বরং বৈষম্যমুখী আমলাতান্ত্রিক নীতিকাঠামোর বিপরীতে দাঁড়িয়ে সমাজে ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠার অনুগামী নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যা ২২ বা ২২০০ পরিবারের পরিবর্তে প্রতিটি সাধারণ মানুষের স্বার্থ ও স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করবে। আর তা করা গেলেই কেবল ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির হারের তালিকার শীর্ষস্থান থেকে বাংলাদেশের পক্ষে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় বিশ্বাস করলে সেটি এ দেশকে করতেই হবে। নইলে এত সংগ্রাম ও ত্যাগের মূল্যটা থাকে কোথায়?


লেখক : পরিচালক
আবু তাহের খান
ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
atkhan56@gmail.com


Source: gg.gg/ccnzr