হতাশায়-বিষণ্নতায় যা করবেন না
(https://www.keranews.org/sites/kera/files/styles/medium/public/201508/depession.jpg)
হরেক কাজ আর হরেক রকমের সহকর্মী নিয়েই আমাদের কর্মজীবন-অফিসের হুড়োহুড়ি। দিনের অনেকটা সময়ই আমাদের অফিসের কাজকর্মে চিন্তা-মনন নিয়ে ডুব দিতে হয়। কাজের আকার আর প্রকৃতি অনুসারে হাজারো সমস্যা-দ্বিধায় অফিসে আমরা হাঁপিয়ে উঠি। কাজ করার সময় সহকর্মী কিংবা নানা কারণে আমাদের মধ্যে বিষণ্নতা ও হতাশা ভর করে বসে। কর্মক্ষেত্রে হতাশায় কিংবা বিষণ্নতায় আমাদের করণীয় কী?
পশ্চিমা দুনিয়ার পেশাদার মানুষেরা হতাশা-বিষণ্নতাকে কর্মক্ষেত্রে কর্মশক্তির বিরুদ্ধে নেতিবাচক আচরণ হিসেবে ভেবে নেন। সেখানে যখনই কোনো কারণে হতাশা-বিষণ্নতা মনে ভর করলে সোজা মনোচিকিৎসকের কাছে চলে যান তাঁরা। আমাদের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মক্ষেত্রে হতাশা-বিষণ্নতায় মনোচিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায় না। আনোয়ার গ্রুপের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা
কাজী রাকিবউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'কর্মক্ষেত্রে নিজেকেই নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবেশ তৈরি করে নিতে হয়। কর্মক্ষেত্রে তারপরও নানা কারণে হতাশা ভর করে। হতাশার কারণ অনুসন্ধান করে সমস্যাকে সমাধান করে এমন পরিস্থিতি কাটানো যায়।' নিজের আত্মশক্তি আর ইতিবাচক মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে হতাশা কাটানো কোনো ব্যাপারই না বলে জানান এই মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ।
সহকর্মী বা কাজের কারণে হতাশা তৈরি হলে নিজেকে ছোট না ভেবে সেই হতাশার কারণ দূর করার দিকে মন দেওয়া উচিত। পরিবারের কারণে সৃষ্ট হতাশা কর্মক্ষেত্রে চেহারায় আনলে নিজের কাজেরই ক্ষতি হয়। বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক রুবিনা খান বলেন, 'যেকোনো ধরনের হতাশাই আমাদের জন্য ক্ষতিকর। কর্মক্ষেত্রে যে হতাশা তৈরি হয়, তা কাজ দিয়েই আমাদের কাটানো উচিত। কর্মক্ষেত্রের নিজের অবস্থান আর যোগ্যতা দিয়ে হতাশা কাটানোর দিকে খেয়াল রাখা উচিত আমাদের। নিজের কোনো ভুলের জন্য হতাশ হলে সে ক্ষেত্রে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা নিজের মধ্যে গড়ে তোলার দিকে খেয়াল রাখা উচিত।'
কর্মক্ষেত্রে নিজের হতাশা নিজের কাজ আর ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। নিজের ব্যক্তিত্ব আর ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে আমাদের কর্মক্ষেত্রে হতাশা আর বিষণ্নতা কাটাতে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
কর্মক্ষেত্রে হতাশায়-বিষণ্নতায় যা করবেন না
* হতাশায় মানুষ অনেক ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে অভিযোগপ্রবণ হয়ে ওঠে। অযথা অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকুন।
* সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক সময় নেতিবাচক মন্তব্য করে থাকি। এমন আচরণ পেশায় ক্ষতি ডেকে আনে।
* সহকর্মী বা ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সঙ্গে রাগারাগি কিংবা কটু কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
* কর্মক্ষেত্রে অযথা রাগারাগি কিংবা অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করবেন না
কর্মক্ষেত্রে হতাশায়-বিষণ্নতায় যা করবেন
* যে কারণে হতাশা তার কারণ বের করে সমাধানের চেষ্টা করুন।
* বেতন-ভাতা কিংবা পদোন্নতিসংশ্লিষ্ট বিষয়ে হতাশ হলে ঊর্ধ্বতন কর্তাকে জানানো সর্বোচ্চ বুদ্ধিমানের কাজ।
* দীর্ঘদিন মনের মধ্যে কোনো ধরনের অস্বস্তি দানা বাধলে তা কাজের ওপরে প্রভাব ফেলে। তখন সহকর্মী বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের দিকে মনোযোগ দিন।
* সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কজনিত কারণে হতাশায় ভুগলে বন্ধুত্ব আর ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তুলুন।
* সেমিনার-মিটিংয়ের কারণে হতাশায় ভুগলে ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে নিজেকে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা করুন।
* সহকর্মী আর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইতিবাচক আচরণ আর সম্পর্ক গড়ে তুললে কর্মক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হতাশা-বিষণ্নতা ভর করার পরিবেশই তৈরি হয় না। ইতিবাচক আচরণ গড়ে তুলুন নিজের মধ্যে।
* হতাশা কাটাতে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
* একঘেয়ে কাজে আমাদের মধ্যে হতাশা জন্মায়, সে ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে অফিসে নতুন কোনো কাজ করতে পারেন।
* অফিসের ছুটির দিনগুলো বাড়িতে কিংবা সামাজিক কোনো সংগঠনে নিজেকে যুক্ত করে নতুন নতুন বন্ধুত্ব তৈরির মাধ্যমে হতাশা কাটানো যায়।
* দীর্ঘদিনের হতাশা-বিষণ্নতা কাটাতে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
Source: The Daily Prothom Alo